বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক সংকট দেখা দিচ্ছিল ফ্রান্সে। সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র তিন মাসের মাথায় অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের। এর ফলে সরকার পতন হল ফ্রান্সে। এর আগে একইভাবে ফ্রান্সে সরকার পতন হয়েছিল ১৯৬২ সালে। অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় তিনিই ফ্রান্সে প্রথম সবচেয়ে কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে দ্রুতই পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন মিশেল বার্নিয়ের।
আরও পড়ুন: ইউরোপে বাড়ছে ‘ইসলামিক জঙ্গিবাদ,’ সতর্ক করলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
জানা গিয়েছে, পরবর্তী বাজেট পেশ করা নিয়ে ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট বেড়ে যায়। এই অবস্থায় বিরোধীরা আস্থা ভোটের দাবি তোলেন। তার ভিত্তিতে ফ্রান্স পার্লামেন্টে বুধবার ভোটাভুটি হয়েছে। ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭ আসনের নিম্নকক্ষের ৩৩১ জন সদস্য বার্নিয়েরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জানা যায়, ফ্রান্সে ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল। বার্নিয়ে সংসদীয় অনুমোদন ছাড়াই বাজেট পাশ করার জন্য বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করায় অতি বাম এবং অতি ডানপন্থী দলগুলি ভোটের দাবি জানায়। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) জোট এবং ডানপন্থী আরএন দল একসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবে বার্নিয়েরকে অপসারণের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার ফলে এখন তিনিই ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি হয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সি বার্নিয়ের মাত্র ৯১ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময়ে, তার সরকার মাত্র ৭৪ দিন স্থায়ী হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাজেট বিল পাশ করতে ফ্রান্সের সংবিধানের ৪৯ এর ৩ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করেছিলেন। তারপরেই বার্নিয়ের সরকার অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়। যদিও সেই বিলএখন খারিজ হয়ে গিয়েছে।
এদিকে, তিন মাসের মধ্যে সরকার পড়ে যাওয়ায় ফ্রান্সে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী, যেহেতু তিন মাস আগে ভোট হয়েছে তাই এক বছর নির্বাচন করা যাবে না। ফলে রাষ্ট্রপতির কাছে বার্নিয়েরের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়োগ করার খুব কম বিকল্প থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক মহলের ধারণা যে রাষ্ট্রপতি বার্নিয়েরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারেন। কারণ নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরেই বেছে নেওয়া হবে, যা ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমানে করা সম্ভব নয়।