ভুয়ো সিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার যে কায়দায় প্রতারণার জাল বিছিয়ে শিল্পপতি এসপি ওসওয়ালের থেকে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হল, তাতে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে পুলিশ। কারণ শুধু ভুয়ো সিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণা করা হয়নি, ভুয়ো ভার্চুয়াল আদালতকক্ষ বানিয়ে একজনকে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সাজিয়ে পদ্মভূষণ প্রাপক শিল্পপতির থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি যখন বুঝতে পারেন, তখন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যে সেই ঘটনায় অসম থেকে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে লুধিয়ানা পুলিশ। ৫.২৫ কোটি টাকা উদ্ধার করে শিল্পপতির অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আর ওই আন্তঃরাজ্য গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতার করতে তল্লাশি চলছে।
কীভাবে সেই জাল বিছিয়ে ছিল প্রতারকরা?
এফআইআরের বয়ান অনুযায়ী, জেট এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গোয়েলের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত একটি আর্থিক তছরুপের মামলায় বর্ধমান গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নাম জড়িয়ে গিয়েছে বলে প্রতারকরা দাবি করেছিল। স্কাইপে কলের মাধ্যমে অনলাইনে সুপ্রিম কোর্টের ভুয়ো শুনানিও হয়। কেউ একজন আবার ভারতের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সেজে সেই মামলা শুনছিল। পরবর্তীতে হোয়্যাটসঅ্যাপে ভুয়ো আদালতের নির্দেশনামাও পাঠিয়েছিল প্রতারকরা।
আরও পড়ুন: Cyber Fraud: '০' ডায়াল করতেই উধাও ৯ লক্ষ টাকা, সিবিআই সেজে রেলকর্মীর পকেট কাটল প্রতারকরা
স্কাইপে ‘অন’ রেখে ঘুমোতে হত শিল্পপতিকে
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিল্পপতি জানিয়েছেন যে তাঁর সঙ্গে গোয়েলের কোনও চেনা-পরিচিতি ছিল না। কিন্তু জেট এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে যোগ থাকা একটি মামলার নাম করে টানা দু'দিন তাঁর উপরে ডিজিটাল নজরদারি চালানো হয়েছিল। নিজেদের সিবিআই অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা তাঁকে মোবাইলে স্কাইপে ‘অন’ রাখতে বলেছিল। তিনি যখন ঘুমোতেন, তখনও ফোনের ওপার থেকে তাঁর উপরে কেউ না কেউ নজরদারি চালাত।
আরও পড়ুন: স্প্যাম কল রুখতে কড়া পদক্ষেপ টেলিকম অথরিটির, ২.৮ লাখ ফোন নম্বর করা হল ব্লক
শুধু সেখানেই শেষ হয়নি প্রতারণার জাল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারিত শিল্পপতি বলেছেন যে ‘স্কাইপের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে ভুয়ো শুনানির সময় ওরা একজনকে (ভারতের প্রধান বিচারপতি) ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তার মুখ দেখতে না পেলেও গলার স্বর শুনতে পেয়েছিলেন। আর কয়েকবার অর্ডার-অর্ডার শুনতে পেয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নাম করে যে নির্দেশনামা দেওয়া হয়েছিল, সেটা এতটা নিখুঁত ছিল যে আমি ভেবেছিলাম যে ওটা সত্যিই। আর সেইমতো টাকাটা (সাত কোটি টাকা) দিয়ে দিয়েছিলাম।’
রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে
পরবর্তীতে তিনি যখন নিজের কোম্পানির এক শীর্ষকর্তাকে সেই বিষয়টি বলেন, তখন ওই ব্যক্তির সন্দেহ হয়। তারপরই পুরো বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন: Impersonating CJI: ‘ক্যাব ভাড়ার জন্য ৫০০ ধার দিন’, CJI- এর নাম করে টাকা চেয়ে মেসেজ, অভিযোগ পুলিশে
সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের দু'জনকে গুয়াহাটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫.২৫ কোটি টাকা (যা সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে রেকর্ড), এটিএম কার্ড এবং মোবাইল ফোনও। ওই প্রতারণা গ্যাংয়ের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গ, অসম, দিল্লির লোক বলে প্রাথমিকভাবে খবর মিলেছে।