বালুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছেন অন্তত ১৫৫ জন ট্রেনযাত্রী। পণবন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পাকিস্তান সেনার সহযোগিতায় নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন তাঁরা। সেই জাফর এক্সপ্রেস থেকে ছাড়া পাওয়া এক যাত্রী শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার গল্প। (আরও পড়ুন: হরিয়ানায় পুরভোটে পচা শামুকে পা কাটল বিজেপির, মেয়র নির্বাচনে হার পদ্ম প্রার্থীর)
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ‘সফাই অভিযান’ শাহের পুলিশের, গ্রেফতার আরও ১২ বাংলাদেশি
বুধবার সকালে বিদ্রোহীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন পাকিস্তানের মহম্মদ বিলাল। তাঁর কথায়, ‘নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছোনোর জন্য পাহাড়ি ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি। সঙ্গীসাথী, আত্মীয়েরা মাঝরাস্তায় আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।’ তাঁরা কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন, এখনও জানেন না বিলাল।তিনি বলেছেন, ‘আমরা যে কী ভাবে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছি, তা বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই।’ ভয়াবহ সেই সময়ের কথা মনে পড়লেই এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তিনি। বিলাল তাঁর মায়ের সঙ্গে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। মাঝপথে ট্রেনটি আটকায় বিদ্রোহীদের দল।
ওই ট্রেনে থাকা আর এক যাত্রী আল্লাহদিত্তা বলছেন, ‘বিদ্রোহীরা যখন চারদিক থেকে ট্রেনটি ঘিরে ফেলেছিলেন, তখনই একটি বিস্ফোরণের শব্দ কানে আসে। তারপর থেকে শুরু হয় অবিরাম গুলিবর্ষণ।’ ছাড়া পাওয়া বাকি যাত্রীদের সঙ্গে মাচ স্টেশনে অপেক্ষা করছেন ৪৯ বছর বয়সি আল্লাহদিত্তা। ইতিমধ্যেই মাচ স্টেশনটিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য একটি অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আল্লাহদিত্তার কথায়, ‘আতঙ্কে সকলে সিটের নীচে লুকিয়ে পড়তে শুরু করেন। প্রথমেই জঙ্গিরা পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করে দাঁড় করায়। তাদের বলেছিলাম যে আমি হৃদ্রোগী। এটা শুনে তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে যেতে দেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী জানিয়েছেন, সশস্ত্র বন্দুকধারীরা যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারা বালুচিস্তান প্রদেশের, আর কারা বাইরের। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর যাত্রীদের সামনেই কয়েক জন সেনাকে গুলি করেন বিদ্রোহীরা। (আরও পড়ুন: 'মেয়েদের দুটো জায়গার চুল ছাড়া অন্য জায়গার চুল কাটা হারাম')
আরও পড়ুন: ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা ৭ বাংলাদেশি হিন্দু আটক, তবে ৩ দালাল ধরতে ব্যর্থ BGB
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসের দখল নিয়েছিলেন স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র বালুচ গোষ্ঠী বিএলএ (বালুচ লিবারেশন আর্মি)-র বিদ্রোহীরা। কাচ্চি বোলান জেলায় পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি জায়গায় যাত্রিবাহী ট্রেনটি অপহরণ করা হয়। ন’টি কোচবিশিষ্ট ওই ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শতাধিক পণবন্দি হন। এরপরেই শুরু হয় পাকিস্তান সেনার উদ্ধার অভিযান। বুধবার ভোরে বহু ক্ষণের চেষ্টায় অপহৃত ওই ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১৫৫ জন যাত্রীকে। এখনও পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন বালুচ বিদ্রোহী। উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ যাত্রীকে কোয়েটায় পাঠানো হয়েছে। আহত কয়েক জন যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাচে। পাক সেনা সূত্রে খবর, বাকি পণবন্দিদের উদ্ধারের জন্য এখনও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী।