‘বীর জারা’ সিনেমাটি অনেকেই দেখেছেন। যেখানে ভারত–পাকিস্তান দুই দেশের নারী পুরুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর তার জন্য জীবনের চরম মূল্য চোকাতে হয়েছিল দু’জনকে। তবে সেটা ছিল একটি চিত্রনাট্যের উপর তৈরি ফিল্ম। যা বেশ হিট করেছিল। কিন্তু বাস্তবে অনেকটা সেরকমই ঘটেছে। এক্ষেত্রে ভালবাসা ধাক্কা খেয়েছে মেয়েটির পক্ষ থেকে। আর ছেলেটি আজও কারাগারে বসে বলে চলেছেন, ভালবেসে কোনও ভুল করেননি তিনি। আর চরম কষ্টের মধ্যে পাকিস্তানের জেলে লড়ে যাচ্ছেন যুবকটি। কারণ ভালবাসা সেখানে পদদলিত হয়েছে। এখন বাড়ি ফিরতে চান তিনি। সেটা ভারতে। তাই লড়াইও কঠিন।
এদিকে ২০ বছরের ওই যুবক পাকিস্তানের তরুণীর প্রেম পাওয়ার জন্য অবৈধভাবে পার করেছিল আন্তর্জাতিক সীমান্ত। অপরাধ এতটুকুই। আইনের চোখে যা অপরাধ। কিন্তু সেখানে গিয়ে নিজের ভালবাসাকে খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ভালবাসার সব আশা যে কারাগারে বন্দি হয়ে যাবে কল্পনাও করেননি তিনি। উত্তরপ্রদেশের আলিগড় এলাকার যুবক বাদল বাবু। এই বাদলবাবু প্রেমে পড়েন পাকিস্তানের তরুণী সানা রানির। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের আলাপ। সেখান থেকে কথাবার্তার শুরু। চরমে পৌঁছয় প্রেম পর্ব। কিন্তু এত সহজে কি সানা রানিকে পাওয়া যাবে? সত্যিকারের প্রেমের প্রমাণ যে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: কেজরিওয়াল কি এবার রাজ্যসভায় যাবেন? জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে তৈরি বিস্তর গুঞ্জন
অন্যদিকে এই সত্যিকারের প্রেমের প্রমাণ দিতে হলে আসতে হবে সীমান্তের বজ্রআঁটুনি পেরিয়ে। চলে যেতে পারে জীবনও। আর এখানে এসে হতে হবে ধর্মান্তরিত। এত কিছু শর্ত সানা রানির থেকে জেনেও পিছপা হননি উত্তরপ্রদেশের যুবক তথা প্রেমিক বাদল বাবু। ভেবেছিলেন ভালবাসার কাছে তো সবাই পরাজিত হয়। যদিও বিপদেও পড়েন সেই ভালবাসাই তা কাটিয়ে পৌঁছে দেবে সানা রানির কাছে। তবেই তো সানার হাত পাওয়া যাবে। এইসব শর্ত মেনে নিয়েই জীবনকে বাজি রেখে পাকিস্তানে প্রবেশ করলেন বাদল বাবু আটারি–ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে। অবৈধভাবেই যান পাকিস্তানে। ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম হয় রেহান। কিন্তু এতকিছুর পরও সমস্ত স্বপ্ন–ভালবাসা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সানা রানি বাদলবাবুর বিয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
আর তখন থেকেই অনিশ্চিত এবং আইনি জটিলতায় পড়ে যান বাদল বাবু। তাই আবার ভারতে ফিরতে আইনজীবীর দ্বারস্থ হন। লাহোরের ওই আইনজীবী ফেয়াজ রামায় এই প্রেম কাহিনী জানতে পেরে চমকে ওঠেন। কারণ বাদল বাবুর কাছ থেকে যখন তিনি সব জানছেন তখন ওই যুবক জেলে বন্দি। মানবিকতার খাতিরে এই মামলা নেন ফেয়াজ রামায়। আর বাদল বাবুর বাবা কৃপাল সিংয়ের কাছ থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি গ্রহণ করেন। এই আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাদল এখানে এসে প্রেমে আঘাত পান। তবে এই প্রেম ফিরে পেতে সে রাখালের কাজ করতে শুরু করেন এখানে। সানা রানির বাড়ি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। বাহাউদ্দিন জেলার মাণ্ডির অন্তর্গত বিলাওয়াল কলোনির বাসিন্দা সানা রানি। ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানে এসে হাজি আসগর খানের কাছে কাজে যোগ দেন বাদল। নিজের প্রেমের কথা আসগরকে বলেছিলেন। এই কথা শুনে সাহায্য করে আসগর। কিন্তু প্রেম যে ধাক্কা খেল। তাই জেলে বসে একটাই কথা বলছেন বাদল, ‘ভালবেসে কোনও বুল করিনি আমি’। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২১ ফেব্রুয়ারি।