সোমবার রাহুল গান্ধীর কার্যালয়ের তরফে ঘোষণা করা হয়, ‘তাঁর হৃদয়ের মাঝে রয়েছে’ সচিন পাইলট। তারইমধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের সোনিয়া গান্ধী স্পষ্ট বার্তা দেন, পাইলটকে দলে রাখা হোক। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই পাইলটকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সরিয়ে দেওয়া হল কেন? ওই ২৪ ঘণ্টায় হঠাৎ কী হল? কোথা তাল-সুর কাটল?
‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনটি শর্ত রেখেছিলেন পাইলট। যা কার্যত পূরণ করা যায় না। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ঘোষণা করার দাবি জানান পাইলট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘শেষ বছরে জনসমক্ষে একটা সরাসরি প্রতিজ্ঞা করা হোক যে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন পাইলট, সেই দাবি জানান। উনি দাবি করেন, সবার সামনে এটা ঘোষণা করা হোক।’
কংগ্রেস নেতাদের দাবি অনুযায়ী, নিজের অনুগামীদের জন্য দ্বিতীয় দাবি জানান পাইলট। অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে যে মন্ত্রী এবং বিধায়করা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, তাঁদের ভালো স্থান দিতে হবে। তবে ভালো জায়গা মানে সবাইকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার জাবি জানাননি পাইলট। ওই কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘তাঁদের সবাইকে পুরষ্কৃত করতে হবে। যেমন - পুরনিগমের শীর্ষে বসাতে হবে বা অন্য কোনও সংস্থার মাথায় তাঁদের ঠাঁই দিতে হবে।’
আর কংগ্রেসের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তৃতীয় যে দাবি তোলা হয়, তাতে পরিষ্কার জানানো হয়, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজস্থান কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অবিনাশ পাণ্ডেকে সরিয়ে দিতে হবে। পাইলটের বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের পক্ষে থাকেন পাণ্ডে এবং তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে রাজস্থান কংগ্রেসের দায়িত্ব দিলে পরিস্থিতি আবারও স্বাভাবিক হবে।
ওই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, ‘আমরা ওঁনাকে ফিরিয়ে সত্যিই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমরা ওঁনার শর্ত মেনে নিতে পারিনি। কারণ ওটা ব্ল্যাকমেল। যদি অন্য রাজ্যেও একই কৌশল নেওয়া হয়?’
বিষয়টি নিয়ে পাইলট মুখ না খুললেও তাঁর এক অনুগামী ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে বলেন, ‘কিন্তু কংগ্রেস তো অন্য রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। তাই ওদের এই ভয়টা কীসের?’
তবে ‘হৃদয়’-এ থাকলেও পাইলটকে ফোন করেননি রাহুল বলে নিশ্চিত হয়েছে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’। তবে পাইলটের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। পাইলট ক্যাম্পের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, গান্ধীদের তরফে ফোন করেননি প্রিয়াঙ্কা।
এওদিকে, মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ১০ টার সময়ও পাইলটকে কংগ্রেসের তরফে ফোন করা হয় বলে দাবি। ওই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘এমনকী আজ সকালে কংগ্রেসের বিধায়কদের বৈঠকের আগেও আমরা ওঁনার সঙ্গে কথা বলি। আমরা সবাই ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি - দলের ভিতর এবং বাইরে ওঁর শুঙাকাঙ্ক্ষীরা। কিন্তু উনি শুনলেন না।’
ওই নেতার দাবি, বিজেপি পাইলটকে আশ্বাস দিয়েছে যদি পাইলট কংগ্রেস থেকে কমপক্ষে ৩০ জনকে ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে গেরুয়া শিবির। তারপরই কংগ্রেসের তরফে রণদীপ সুরজেওয়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমরা দুঃখিত যে সচিন পাইলট এবং তাঁর কয়েকজন মন্ত্রী বিজেপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
যদিও পাইলটকে উদ্ধৃত করে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমি জীবনে কখনও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি বা করিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম অশোক গেহলট আমায় প্রকাশ্যে যেভাবে হেনস্থা করেছিলেন, তা জনসমক্ষেই স্বীকার করা হোক এবং ঠিক করা হোক।’