মঙ্গলবার ১৪টি রাজ্যের ৭৬টি স্থানে অভিযান চালাল সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। অনলাইনে শিশুদের যৌন নির্যাতনমূলক পোস্ট ও প্রচারে অভিযুক্ত ৮৩ জনকে পাকড়াও করতে এই পদক্ষেপ। এদের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রায় দু'ডজন মামলা রুজু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারতের বিভিন্ন শহর এবং বিদেশেও রয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন অপরাধী নয়। এরা প্রায় প্রত্যেকেই একাধিক সিন্ডিকেটের অংশ। এই সিন্ডিকেটগুলি শিশুদের যৌন নির্যাতনমূলক পোস্ট, প্রচার এবং দেখার সঙ্গে জড়িত।
এই ব্যক্তিরা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ/প্ল্যাটফর্মে এবং থার্ড পার্টি স্টোরেজ/হোস্টিং প্ল্যাটফর্মে লিঙ্ক, ভিডিযো, ছবি, টেক্সট, পোস্ট, পোস্ট এবং হোস্টিং শেয়ার করার মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের প্রচার করে। একটি এফআইআরে এমনটাই উল্লেখ করেছে সিবিআই।
সবমিলিয়ে, দু'দিনে ২৩টি এফআইআর দায়েক করেছে সিবিআই। সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার পরে তাদের অতর্কিতে অভিযান চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সিবিআইয়ের দলগুলি অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, বিহার, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালায়। এমনটাই জানিয়েছেন সিবিআই-এর মুখপাত্র আরসি জোশী। বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অনলাইন শিশুদের যৌন নির্যাতন এবং শোষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলির জন্য সিবিআই-এর একটি বিশেষ ইউনিট রয়েছে। তার নাম অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতন ও শোষণ প্রতিরোধ/তদন্ত (OCSAE)। বিভিন্ন রেফারেন্স/তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি, ইউনিটটি অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতন এবং শোষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন অপরাধের তদন্ত করে। এর পাশাপাশি CBI ইন্টারপোলের নোডাল এজেন্সি। আন্তর্জাতিকভাবে শিশুদের যৌন নির্যাতনমূলক (ICSE) ইমেজ এবং ভিডিয়ো প্রচারে অভিযুক্তদের ডেটাবেস বিভিন্ন দেশের তদন্তকারীদের কাছে পৌঁছে যায় এর মাধ্যমে। ভারত-সহ বিশ্বের ৬৪টি দেশ ICSE ডেটাবেস ব্যবহার করে। এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষ ছবি এবং ভিডিয়ো থেকে বিশ্বব্যাপী ২৩,৫০০ নির্যাতিত এবং ১০,৭৫২ জন অপরাধীকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছে এই ডেটাবেস৷
গত বছরের ১৭ নভেম্বর সিবিআই উত্তরপ্রদেশের রাম ভবনের একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল। প্রায় ৫০ জন শিশুর যৌন নির্যাতন এবং তাদের ভিডিও ও ফটো ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আইসিএসই ডাটাবেসে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে সিবিআই।
শিশু যৌন নির্যাতন ভারতে ২০১২ সালের শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ (POCSO) আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তি আইনে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে শিশু পর্নোগ্রাফি প্রকাশ, ব্রাউজিং বা প্রেরণে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
এছাড়া নয়া আইটি নীতি ২০২১-এ অনলাইনে যৌন হেনস্থার শিকার মহিলাদের সহায়তা ও সুরক্ষার জন্য 3(2)(b) ধারা জারি করা হয়েছে। ইন্টারনেট থেকে রিভেঞ্জ পর্ন, শারীরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী ফটো-ভিডিয়ো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা ও পদক্ষেপ নেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। আইটি নীতি ২০২১-এ শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের হুমকি মেসেজ ট্র্যাক করা বিধানও রয়েছে। নয়া নিয়মে বলা হয়েছে, মেসেজিং মাধ্যমদের (সোশ্যাল মিডিয়া) বহুবার ফরোয়ার্ড হওয়া মেসেজের প্রথম প্রেরণকারী ট্র্যাক করতে, প্রশাসনকে সাহায্য করবে।