অন্যান্য বছর মহা সমারোহে মণ্ডপে তাঁর আগমন ঘটে। ঢোল-তাসার আওয়াজে চারিদিকে তখন কান পাতা দায় হয়। প্রথম দিন থেকেই মণ্ডপের বাইরে পড়ে ভক্তদের লম্বা লাইন। কিন্তু করোনাভাইরাসের দাপটে এবার সব অমিল। তবুও গণেশ পুজো বলে কথা। মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। তাই সামনাসামনি দর্শন থেকে বঞ্চিত হলেও ভক্তি সহকারে অনলাইনে গণেশ ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে মায়ানগরী।
শহরের অন্যতম বড় পুজো তথা কিংস সার্কেলের গৌর সারস্বত ব্রাক্ষণ সেবা মণ্ডলের (কমিটি) পুজোয় রোজকার আরতি ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভ দেখানো হবে। সকাল সাতটা থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত লাইভ ভার্চুয়াল দর্শনের পাশাপাশি আগামী কয়েকদিনে অনলাইন দানেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পুজোর ট্রাস্টি আর জি ভাট বলেন, ‘করোনার বিধিনিষেধের জন্য মণ্ডপের মধ্যে মাত্র পাঁচজনকে ঢুকতে দেওয়া যাবে। তাই আমরা শুধুমাত্র পাঁচজন পুরোহিতকে মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাঁরা দিনভর পুজো করবেন এবং মন্ত্রোচ্চারণ করবেন।’
জরুরি অবস্থা (১৯৭৫-৭৭) হোক, মুম্বই দাঙ্গার (১৯৯২-৯৩) সাক্ষী থাকা দক্ষিণ মুম্বইয়ের চিনচপোকলির লালবাউগছা রাজা গণপতি মণ্ডলের পুজোয় এই প্রথম কোনও মূর্তি থাকছে না। যা ৮৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। বরং করোনা মহামারারী আবহে ১১ দিনের প্লাজমা দান কর্মসূচি চলছে।
সেখান থেকে কয়েকটি গলি দূরে গণেশ গল্লিতে শনিবার সকালে মুম্বইছা রাজার প্রতিমা উন্মোচন হয়েছে। বিশাল বড় মূর্তি ও মহা সমারোহের সঙ্গে মণ্ডপসজ্জার পরিবর্তে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো এবার মাত্র তিন ফুট উচ্চতার গণেশ মূর্তি পূজিত হচ্ছে। লালবাগ সার্বজনিক উৎসব মণ্ডলের (মুম্বইছা রাজা) ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রাম পেজে লাইভ গণেশ দর্শন করতে পারবেন ভক্তরা। শুধু তাই নয়, করোনায় মানুষের উপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি পাওয়ায় সদস্যদের থেকে স্বেচ্ছায় কোনও অনুদান নেওয়া হচ্ছে না। পুজো কমিটির সদস্য অনিকেত সিং বলেন, ‘স্যানিটাইজেশন বিধি ও সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে ভক্তদের দর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে। আমরা ভক্তদের অনলাইন দর্শনের জন্য উৎসাহ দিচ্ছি।’ অন্যবারের মতো শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিরঞ্জনও হবে না এবার। কৃত্রিম পুকুরে কোনও শোভাযাত্রা ছাড়াই নিরঞ্জন করা হবে।
পশ্চিম শহরতলির আন্ধেরিছা রাজার পুজোয় নির্ধারিত দু'দিন পর নিরঞ্জন হবে। ভিড় এড়াতে এবার হাইড্রলিক ক্রেনে চার ফুটের গণেশ ঠাকুরকে রাখা হয়েছে। আজাদ নগর উৎসব কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘মূল বিষয়টি হল যে ভক্তরা যাতে দূর থেকেই দর্শন করতে পারেন এবং মণ্ডপে ভিড় করতে না হয়।’ একইসঙ্গে কমিটির তরফে অনলাইন দর্শনের বন্দোবস্তও করা হয়েছে।