মহাকুম্ভের সময় প্রয়াগরাজে গঙ্গার জল মান ঠিকই ছিল। স্নানের উপযুক্ত ছিল। সংসদে এমনটাই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। সঙ্গমের দূষিত জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া। গত মাসের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতে নতুন রিপোর্ট দিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, প্রয়াগরাজের সঙ্গমের জল মহাকুম্ভের সময় স্নানের উপযুক্ত ছিল। ওই জলে বিপজ্জনক ব্যাকটিরিয়া ছিল না।
এই আবহে সোমবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে লোকসভায় সমাজবাদী পার্টির সাংসদ আনন্দ ভাদৌরিয়া এবং কংগ্রেস সাংসদ কে সুধাকরণ প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কি জাতীয় পরিবেশ আদালতকে জানিয়েছে যে মহাকুম্ভের সময় প্রয়াগরাজের সঙ্গমস্থলে জলের গুণমান স্নানের জন্য প্রাথমিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে? জবাবে ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের সময় ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গার জল স্নানের জন্য উপযুক্ত ছিল। ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত নদী পরিষ্কারের জন্য ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গাকে মোট ৭,৪২১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও সিপিসিবির রিপোর্ট অনুযায়ী, গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর মিলনস্থল সঙ্গমে BOD, DO এবং pH-এর গড় মান স্নানের জলের জন্য অনুমোদিত সীমার মধ্যে ছিল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, গত ১২ জানুয়ারি থেকে গঙ্গার পাঁচটি জায়গায় এবং যমুনা নদীর দুটি জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই জায়গায় আলাদা আলাদা দিনে আবার আলাদা জায়গায় একই দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সপ্তাহে দুবার করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া বিশেষ বিশেষ তিথিগুলিতেও জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে সঙ্গমের জল স্নানের উপযুক্তই ছিল। একই সঙ্গে কুম্ভের সময় গঙ্গার জলের গুণমান বজায় রাখার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের গৃহীত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথাও ভূপেন্দ্র যাদব সংসদে বলেছেন।এরমধ্যে রয়েছে নোংরা জল পরিশোধনের জন্য ১০টি এসটিপি, ২১টি অব্যবহৃত ড্রেনের নোংরা জল পরিশোধনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৭টি জিওটিউব স্থাপন।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জাতীয় পরিবেশ আদালতে একটি রিপোর্ট দিয়ে জানায়, মহাকুম্ভের সময় যে প্রয়াগরাজের সঙ্গমে ডুব দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কার্যত গোটা দেশ, সেই সঙ্গমের জল স্নানের অনুপযুক্ত। সঙ্গমের দূষিত জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওই রিপোর্ট নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়ে যায়। সাফাই দিতে আসরে নামতে হয় খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। তিনি পালটা দাবি করেন, স্নানের তো বটেই, সঙ্গমের জল পানেরও উপযুক্ত।দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সেই রিপোর্টের পরও অবশ্য ভক্তদের ভক্তিতে বিশেষ ভাঁটা পড়েনি। বিন্দুমাত্র কমেনি কুম্ভের ভিড়। সরকারের দাবি অনুযায়ী, মেলা শেষ হওয়া কুম্ভে ডুব দিয়েছেন ৬০ কোটি মানুষ। মেলা শেষে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও উল্টো কথা বলছে।