১৯৭০ দশক প্রায় শেষ তখন, মুম্বই এলেন গৌতম আদানি। বড় ভাই বিনোদ যে কলেজ থেকে পড়েছেন, সেই জয় হিন্দ কলেজেই পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু কলেজ ভর্তি নেয়নি তাঁকে। ফিরিয়ে দিয়েছিল। পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাখ্যাত আদানি, আর ফিরে তাকাননি। ডিগ্রির আশা ছেড়ে ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছিলেন। আর আজ সেই আদানিই ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। একসময় যে কলেজ তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, আজ শিক্ষক দিবসে সেই কলেজের পড়ুয়াদেরই অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন আদানি। আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধান অতিথি হিসাবে।
আনুমানিক ১৯৭৭ বা ১৯৭৮ সালে মুম্বই আসেন গৌতম আদানি। বয়স তখন মাত্র ১৬। মুম্বইয়ের জয় হিন্দ কলেজ ভর্তি নিতে 'না' করতেই, হীরার বাছাই করার কাজ শুরু করেন তিনি। ভিন্ন কর্মজীবনের পথ বেছে নেন। এদিন শিক্ষক দিবসে, জয় হিন্দ কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিক্রম নানকানি, বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হিসাবে আদানির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এমনটাই উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: (WBPSC Miscellaneous 2024 পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড প্রকাশিত! কীভাবে ডাউনলোড করবেন? রইল জরুরি তথ্য)
অনুষ্ঠান চলাকালীন, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বলেন, আমি মাত্র ১৬ বছর বয়সে আমার প্রথম সীমানা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাকে মুম্বইতে অজানা ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে যেতে হয়েছিল। মানুষ এখনও আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কেন মুম্বাই এসেছি? এবং কেন আমি আমার শিক্ষা শেষ করিনি।' আসলে আদানির কথায়, তরুণ মন সীমাবদ্ধতাকে বাধা হিসাবে নয় বরং চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখেন, যা তাঁদের সাহসের পরীক্ষা করে। সাফল্যের ফলে এগিয়ে দেয়।
কীভাবে এত বড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন আম্বানি
আদানির ক্ষেত্রে তাই-ই হয়েছে। প্রায় দুই বছর হীরা বাছাই করার কাজ করার পর, আদানি তাঁর ভাইয়ের একটি প্যাকেজিং কারখানায় কাজ করার জন্য গুজরাটে ফিরে যান। অবশেষে ১৯৯৮ সালে নিজের ফার্ম শুরু করার পর, শুরু হয় আদানির স্বপ্ন অভিযান। খুব দ্রুতই, পরবর্তী আড়াই দশকে আদানির কোম্পানিগুলো বন্দর, খনি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, সিটি গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সিমেন্ট, রিয়েল এস্টেট, ডেটা সেন্টার এবং মিডিয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। ৬২ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে, আজ আদানি ১৩টি সমুদ্রবন্দর, সাতটি বিমানবন্দর চালান। বিদ্যুৎ ও পুনর্নবীকরণযোগ্য এনার্জির প্রধান খেলোয়াড় তিনি। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট কোম্পানি পরিচালনা করেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছেন। এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিও পুনরায় নির্মাণ করছেন।
আরও পড়ুন: (Infosys Delayed Offer Letter: আড়াই বছর পর হাজারের অধিক ইঞ্জিনিয়ারদের অফার লেটার দিল ইনফোসিস)
১৯৮০-এর দশকে, গৌতম আদানি একটি ট্রেডিং কোম্পানি শুরু করেন। বয়স তখন তাঁর মাত্র ২৩। ক্ষুদ্র শিল্পে সরবরাহের জন্য পলিমার আমদানির এই ব্যবসা ভাল চলছিল তখন। ১৯৯১ সালের পর তিনি পলিমার, ধাতু, টেক্সটাইল এবং খামারের পণ্যগুলির মতো বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করে একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক সংস্থা স্থাপন করেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই আদানি তাঁর কোম্পানিকে ভারতের বৃহত্তম বৈশ্বিক ট্রেডিং হাউসের মতো অবস্থানে পৌঁছে দেন। এরপর ১৯৯৪ সালে, নিজের কোম্পানিকে প্রকাশ্যে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আদানি। আদানি এক্সপোর্টস, এখন আদানি এন্টারপ্রাইজ নামে পরিচিত। তার আইপিও চালু করেছে অর্থাৎ জনসাধারণকে এখন নিজের শেয়ার কেনার সুযোগ দেয় কোম্পানিটি।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি, একজন ব্যবসায়ী, তাঁকে গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চল থেকে লবণ উৎপাদন ও উৎস করার জন্য একটি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেন। যদিও অংশীদারিত্বটি ঘটেনি শেষ পর্যন্ত। এর বদলে আদানির হাতে পড়ে ছিল মুন্দ্রার প্রায় ৪০,০০০ একর জমি। ওই জমিতে লবণ রপ্তানির জন্য একটি জেটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যে জমিটা অন্যদের চোখে শুধু অকেজো, অনুর্বর জমি ছিল, আদানি সেখানে সম্ভাবনা দেখেছিলেন। আজ, মুন্দ্রা ভারতের বৃহত্তম বন্দর হয়ে উঠেছে। বৃহত্তম শিল্প এলাকা, কন্টেইনার টার্মিনাল, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সৌর উত্পাদন সুবিধা, তামা প্ল্যান্ট এবং ভোজ্য তেল শোধনাগারের মূল ক্ষেত্র এই বন্দরটি। এবং আদানি বিশ্বাস করে যে মুন্দ্রা এখনও আরও বড় জায়গায় পৌঁছোবে।
আরও পড়ুন: (NAT 2024: ১৬ জন শিক্ষককে দেওয়া হবে জাতীয় পুরস্কার, জানুন কোন বিভাগে স্বীকৃতি দেবে শিক্ষামন্ত্রক)
আসলে, বরাবরই একাধিক চ্যালেঞ্জের পিছনে দৌড়ে সেটিকে সফল করে ফিরেছেন আদানি। তাই তো গৌতম আদানি এখন কচ্ছের কঠিন মরুভূমিতে বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্নবীকরণযোগ্য এনার্জি পার্ক তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন। সৌর প্যানেল ও বায়ু টারবাইনের মতো উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য কাজ করেছেন। মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিও পুনরায় র্নির্মাণ করছেন।
প্রথাগত ডিগ্রি না নিলে কী হবে, মুম্বইতে তো জীবনের শিক্ষায় ব্যাপক শিক্ষিত আদানি। আজ যে ব্যবসা করে শতাধিক বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি বানিয়েছেন, সেই ব্যবসার জন্য মুম্বই ছিল তাঁর প্রশিক্ষণের জায়গা। এ প্রসঙ্গেই, শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে 'ব্রেকিং লিমিটস: দ্য পাওয়ার অফ প্যাশন অ্যান্ড আনকনভেনশনাল পাথস টু সাকসেস' বিষয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ৬২ বছর বয়সী আদানি বলেন, 'ব্যবসার ক্ষেত্র সবচেয়ে ভালো শিক্ষা দিতে পারে। মুম্বই-ই আমাকে বড় চিন্তা করতে শিখিয়েছে, সীমানা ছাড়িয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস করতে শিখিয়েছে।'