ভারতে সমকামী বিয়ে আইনত স্বীকৃত নয়। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল সমকামী বিয়ে মেনে নিয়েছে। গত বছরই সমকামী বিয়ের অনুমতি দিয়েছিল নেপাল। এবার সে দেশের এক সমকামী দম্পতি একই পথে হাঁটলেন। অনুমতির পর এই প্রথমবার কোনও সমকামী প্রেমিক জুটি বিয়ে করলেন নেপালে। অর্থাৎ নেপালে এটাই প্রথম বৈধ সমকামী বিয়ে। যদিও, জানা গিয়েছে যে সরকার অনুমতি দেওয়ার আগে দেশটিতে মোট ছয়বার সমকামী বিয়ে হয়েছে।
আরও পড়ুন: (Hassan Nasrallah: 'এই পবিত্র ভূমি রক্ষা কর', নিহত হাসান নাসারুল্লাহর অডিয়ো বার্তা প্রকাশ করল হেজবোল্লা)
হিন্দু ও খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী বিয়ে
নেপালের এই প্রথম সমকামী দম্পতির নাম প্রজিত বুদ্ধথোকি, বয়স ২৭ এবং জোসেফ ফস্টার, বয়স ৩০। বুদ্ধথোকি নেপালের বাসিন্দা এবং ফস্টার আমেরিকার বাসিন্দা। তাই তাঁদের বিয়ে হয়েছে হিন্দু ও খ্রিস্টান, উভয় রীতি মেনেই। খ্রিস্টান পুরোহিতের উপস্থিতিতে, জোসেফ এবং প্রজিত প্রথমে আংটি বিনিময় করেন এবং তারপর বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ৬ অক্টোবর জোসেফ ও প্রজিতের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়েছে পূর্ব নেপালের সুনসারি জেলার ধরন সাব-মেট্রোপলিটন সিটিতে। তাঁরা বিয়ের সার্টিফিকেটও পেয়েছেন।
প্রজিত ও জোসেফের বিয়েতে ৫০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্য, সম্পত্তির পরিবারের সদস্য এবং মিডিয়ার লোকজনও এসেছিলেন। গত দুই বছর ধরে একসঙ্গে থাকছেন জোসেফ ও প্রজিত। অবশেষে তাঁদের বিয়েতে সায় দিল আইন। বিয়ে করলেন দুজনে। নেপালের এই সিদ্ধান্তে তাই খুশি জোসেফ। তবে, তাঁদের সমকামী প্রেমকে আইনি বৈধতা দেওয়ার যাত্রাটা একেবারেই সহজ ছিল না। বিয়ের রেজিস্ট্রি করার সময় কাগজপত্র নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁরা। কারণ স্থানীয় কর্মকর্তারা সমকামী বিবাহ কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তা জানতেন না।
এই সময় তাঁদের পাশে থেকে, বিয়ের আয়োজন করেছে এনজিও 'মায়া কো পেহচান'। এই এনজিওটি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে। সুনীল বাবু পান্ত এই বড় সংগঠনটির কর্ণধার। বিশেষ বিষয় হল সুনীল বাবুও হলেন নেপালি পার্লামেন্টের প্রথম সমকামী সদস্য। তিনিই বিয়ের সময় একজন বাবা হিসাবে বিয়ের রেজিস্ট্রিতে সহায়তা করেছিলেন। দেশের প্রথম সমকামী বিয়ে প্রসঙ্গে সুনীল বাবু এদিন বলেন, এটা নেপালের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি বলেছিলেন যে এর দরুণ নেপাল সমকামী বিয়ের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এতে নেপালের পর্যটন খাতও বাড়বে।
এরই পাশাপাশি, প্রজিত এবং জোসেফের বিয়ে রেজিস্ট্রিতে সাহায্যকারী অ্যাডভোকেট শ্যাসিষ্ঠা শ্রেষ্ঠা জোর দিয়ে এটা বলেন যে নেপাল যখন এগিয়েই যাচ্ছে, তখন এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট আইন দরকার৷ এখনও ওঅনিশ্চয়তা রয়েছে। বলা বাহুল্য, এই সমকামী বিয়ে কাঠমান্ডুতে মার্কিন দূতাবাসের কাছ থেকেও অনেক সমর্থন পেয়েছে।
ভারতে সমকামী বিয়ে অনুমোদিত নয়
উল্লেখ্য, ভারতে এখনও সমকামী বিবাহ স্বীকৃত নয়। অথচ দেশটিতে যে সমকামী বিয়ের চাহিদা ছিল না, তা কিন্তু একেবারেই নয়। সমকামী বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিও হয়েছে। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই তা খারিজ করে দেয়। আদালত দাবি করে যে এটি আইনসভার এখতিয়ার। পার্লামেন্টই একমাত্র সমকামী বিয়ের মামলায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদিও শুনানির সময় সিজেআই চন্দ্রচূড় সমকামী দম্পতিদের একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন, তবে এই বিষয়ে আবার অন্যান্য বিচারকরা সহমত ছিলেন না।