ট্রাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দু'টি মোটরবাইকে সওয়ার ছিল তিনজন করে মোট ছ'জন। পাকা রাস্তায় দুরন্ত গতিতে বিপজ্জনকভাবে ছুটছিল বাইক দু'টি। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (এমআই) বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তি ওই ছয় আইনভঙ্গকারীকে শুধু সেই গতি কমাতে বলেছিলেন এবং তারা যাতে রাতের বেলা ডিপার লাইট ব্যবহার করে, সেই পরামর্শও দিয়েছিলেন ওই যুবক। আর, শুধুমাত্র এই কারণে অভিযুক্ত ছয় আইন ভঙ্গকারী তাঁকে পিটিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ!
ন্যক্কারজনক এবং পৈশাচিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের গয়া জেলায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ রাত ১১টা নাগাদ টেকারি এবং পাঁচানপুরের সংযোগস্থলে রাজ্য সড়কের উপর এই ঘটনা ঘটে। নিহত ওই সেনা আধিকারিকের নাম প্রবীণ কুমার শর্মা। তাঁর বয়স ৩৫ বছর। ঘটনার সময় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
সেই সময়েই ওই ছয় অভিযুক্ত তাদের বাইক দুরন্ত গতিতে ছুটিয়ে একটি চারচাকা গাড়িকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। যার ফলে প্রবীণের বাইকের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগার জোগাড় হয় ওই দু'টি বাইকের। তখনই প্রবীণ তাদের ধীরে বাইক চালাতে বলেন এবং ডিপার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
আর তাতেই ওই ছ'জন মারমুখী হয়ে ওঠে। টেকারি থানা এলাকার মাহমানা গ্রামের কাছে রাস্তার উপরেই প্রবীণকে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মারা হয়। তারপর তাঁকে সেখানেই ফেলে পালিয়ে যায় আততায়ীরা। পরবর্তীতে প্রবীণের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ তারিখের ওই ঘটনার পর গুরুতর জখম প্রবীণকে সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর এমন নির্মমভাবে প্রাণ হারানোর খবর চাউর হতেই স্থানীয় থানার সামনে জমায়েত শুরু করে এলাকাবাসী। অপরাধীদের গ্রেফতারি ও কঠোরতম শাস্তির দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ প্রদর্শন।
প্রবীণের বাবা - রাম বিনোদ শর্মা জানিয়েছেন তার ছেলে ২০১১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। রাম বিনোদ নিজেও একটা সময় রাজ্য কারা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে, প্রবীণের পোস্টিং ছিল রাজস্থানের জয়পুরে। সম্প্রতি হোলির জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পারিবারিক কিছু অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ঘটনার দিনও এক আত্মীয়ের বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেখান থেকে ফিরছিলেন তিনি।
অভিযোগ, এই ঘটনার পর যখন আপতকালীন ১১২ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকী, স্থানীয় থানাকে বারবার যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলা হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি।
রাম বিনোদ জানান, গয়া পুলিশ তখনই গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, যখন হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর ছেলের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। অন্যদিকে, এই ঘটনার এবং পুলিশের এহেন অপদার্থতার প্রতিবাদে সমাজকর্মী এবং রাজনীতিকদের একাংশও সরব হন। তারপর পুলিশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই আততায়ীদের সন্ধান শুরু করে।
যদিও গয়ার এসএসপি আনন্দ কুমার দাবি করছেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরই একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়। ফরেন্সিক দলকেও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নমুনা সংগ্রহ করার জন্য।
অন্যদিকে, এসপি রামানন্দ কৌশল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্য়েই প্রমোদ কুমার যাদব এবং বিকাশ কুমার যাদব নামে দু'জনকে গ্রেফতার করার হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ধৃতরা জেরায় দোষ কবুল করেছে বলেও দাবি পুলিশের।