৫ বছর বয়সেই বাবার হাত ধরে ভিটেমাটি, দেশ, সবটুকু ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন গায়েত্রী কুন্ডু। এখন তাঁর বয়স ৮১ বছর। মাঝখানে ৭৬টি বছর কেটে গিয়েছে। গঙ্গা, যমুনা দুই দিয়েই অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তবে সব কিছু ভুলে গেলেও তাঁর কেবল মনে ছিল ওপার বাংলার ঠিকানাটা। ৫/১ পূর্ণ চন্দ্র ব্যানার্জি লেন, শিংটোলা। এত বছর কেটে যাওয়ার পরেও তিনি দেশের ফেরার লোভ সামলাতে পারেননি। আসলে মাটির টান যে ভীষণ বস্তু!
আশি পেরিয়ে যাওয়ার এই হাওড়া নিবাসী তাঁর মেয়ে দেবাঞ্জলির সঙ্গে পাড়ি দেন ওপার বাংলার বাবার ভিটের উদ্দেশ্যে। গিয়ে সব কিছু খুঁজেও পান। কিন্তু অতীতের সেই ঝাপসা স্মৃতির সঙ্গে আজকের কিছুরই মিল নেই। সব কিছুরই চেহারা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু ঠিকানা? সেটা আজও এক আছে। তাই খানিকটা হতাশ হলে তার দ্বিগুণ আনন্দিত হয়েছেন যে মাটিতে তাঁর জন্ম সেখানে ফিরে যেতে পেরে। কারণ সেখানে গিয়েই তিনি তাঁর ফেলা আসা দিনগুলোকে আরও একবার খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন।
তাঁর ছোটবেলার সেই বাড়িতে ছিল সবুজ গেট, প্যাঁচানো সিঁড়ি, ইত্যাদি। আর আজ সেখানেই উঠেছে পেল্লাই ফ্ল্যাট। ঠিকানা এক হলেও, বাড়ির নাম পাল্টে গিয়েছে। সেই বাড়ির আজকের নাম মোসাম্মৎ রহিম ভিলা।
দেবাঞ্জলি দেবী পেশায় শিক্ষিকা। তিনিই মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন মায়ের জন্মভিটেতে। ঠিকানার খোঁজ করতেই স্থানীয়রা দেখিয়ে দেন। আর সেই বাড়ির সামনে গিয়েই তাঁর মনে জাগে এক অনন্য অনুভূতি। দেশ ছেড়ে আসার পর আর কোনদিন সেখানে ফিরতে পারবেন এটা ভাবেননি। কিন্তু যখন সেটা বাস্তব হল ভেবেছিলেন বাড়ি এসে সবাইকে বলবেন তাঁর ' বাড়ির ' কথা। কিন্তু একি! বাড়ি কই? সে তো নেই। তাই তাঁর একটু মন খারাপ। তবে সবার যে দেশে জন্ম সেই দেশে ফিরতে পেরেছেন, সেই ঠিকানার সামনে দাঁড়াতে পেরেছেন তাতেই তিনি খুশি। খুশি সেখানকার বাসিন্দাদের ব্যবহারে।
গায়েত্রী দেবী জানান, তাঁরা ১৯৪৬ সালেই এপার বাংলায় চলে আসেন। তখন তাঁর কেবল ৫ বছর বয়স। আর এখন যখন ফিরলেন তখন বয়স ৮১ পেরিয়েছে। তাঁর গল্প যেন অনেকটাই তসলিমা নাসরিনের ‘ফেরা’ গল্পটিকে মনে করিয়ে দেবে। কিংবা পাওলি দাম অভিনীত ‘মাটি’ সিনেমাটিকে।