বর্তমান যুগে সীমিত সম্পদের কারণে টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়ার চাহিদা বাড়ছে৷ জার্মানিতে নির্মাণের ক্ষেত্রে কংক্রিট রিসাইক্লিংও বেড়ে চলেছে৷ কয়েকটি কোম্পানি এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে৷ কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার নতুন কংক্রিট সৃষ্টির উদ্যোগ চলছে৷ প্রতি বছর শুধু জার্মানিতেই এমন ২৮ কোটি টন জঞ্জাল সৃষ্টি হয়৷ জার্মানির দক্ষিণের হাইনরিশ ফেস কোম্পানি নির্মাণের উপকরণ পুনর্ব্যবহারের কাজে হাত পাকিয়েছে৷
কংক্রিটের টুকরোগুলি স্টোন ক্রাশার যন্ত্রে ফেলে ছোট কণিকায় রূপান্তরিত করা হয় এবং আকার অনুযায়ী সেগুলি আলাদা করা হয়৷ সেই কণিকা সিমেন্ট উৎপাদন কোম্পানিকে বিক্রি করা হয়৷ শুধু ব্যবসা নয়, এর ফলে প্রকৃতিরও উপকার হয়৷ প্রকল্পের প্রধান সেবাস্টিয়ান রাউশার বলেন, ‘সেই প্রক্রিয়া কাছাকাছি ঘটলে আমরা লাখ লাখ কিলোমিটার ট্রাকযাত্রা কমাতে পারি৷’
সাধারণত কংক্রিট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বালি বিশাল গহ্বর থেকে তুলে কয়েকশ' কিলোমিটার দূরে আনা হয়৷ দ্বিতীয় প্রধান উপকরণ হিসেবে নুড়িপাথরের ক্ষেত্রেও এমন পরিবহণের প্রয়োজন ঘটে৷ কিন্তু নুড়িপাথর ও বালুর পরিমাণ কমে চলেছে৷
রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে পুরানো লাল ইটও কংক্রিট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পুরানো এক পিট থেকে পুনর্ব্যবহৃত বালু আসছে৷ এখানে সেটি পরিষ্কার করে ও ছেঁকে দানার মাপ অনুযায়ী আলাদা করা হয়৷ সেবাস্টিয়ান রাউশার বলেন, ‘এখানে যা দেখছেন, তা এককালে সেতু, ফ্লোর প্যানেল বা বাড়ি ছিল৷ আমরা সেগুলি দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করছি৷ সব উপাদান কোনও আবর্জনার স্তূপ বা ব্যাকফিলে গিয়ে পড়ত৷ আর আমরা সেগুলি দিয়ে উচ্চ মানের নির্মাণের উপকরণ তৈরি করতে পারছি, যা নতুন নির্মাণের কাজে লাগানো হচ্ছে৷’
যেমন রিসাইক্লিং করা পণ্য একই অঞ্চলের কংক্রিট প্রস্তুতকারক কোম্পানির মতো ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়৷ বেশিরভাগ প্রতিযোগীর তুলনায় সেই কোম্পানি বাড়তি নজর কাড়ছে৷ কারণ গোটা বিশ্বে মাত্র দুই শতাংশ নির্মাণের উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হয়৷
হলৎসিম কোম্পানি পুনর্ব্যবহৃত উপাদানের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে৷ কোম্পানির উৎপাদনের ৩০ শতাংশের উৎস এমন উপাদান৷ এমনভাবে তৈরি কংক্রিটের দামও কম হয়৷ এই প্লান্টে নির্মাণের উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়৷ সেই কংক্রিট দেখতে বেশ অন্যরকম হয়৷ অনেক গ্রাহক প্রচলিত কংক্রিটের তুলনায় এমন উপাদান বরং বেশি পছন্দ করছেন৷ হলৎসিম কোম্পানির হাগেন আইশেলে বলেন, ‘মানুষও বুঝছে যে আমাদের সম্পদ বাঁচাতে হবে৷ তাই এর চাহিদাও আগের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ ফলে এমন উপকরণের ব্যবহার বাড়ছে৷’
জার্মানির দক্ষিণে ব্রাউন-স্টাইনে নামের কোম্পানিতেও পুনর্ব্যবহৃত নির্মাণের উপকরণ আনা হয়৷ এই কোম্পানি সেগুলি দিয়ে কংক্রিটের ব্লক তৈরি করে৷ রিসাইকেল করা বালু ও পুনর্ব্যবহৃত রক গ্র্যানিউল দিয়ে এমন ব্লক তৈরি হয়৷ কোম্পানির ল্যাবে বার বার পাথরের নতুন মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়৷ রিসাইক্লিং করা উপাদানের অনুপাত বাড়াতে রং, আকার ও উপকরণ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে৷ বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত উপাদান ব্যবহার করা সম্ভব হলেও সেই অনুপাত আরও বাড়ানোর সদিচ্ছা রয়েছে৷ ব্রাউন-স্টাইনে কোম্পানির আন্দ্রেয়াস ব্রুংকহর্স্ট বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আপসাইক্লিং-ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ অর্থাৎ আমরা উচ্চ মানের ডিজাইনও সম্ভব করতে চাই৷ ইটের মতো দেখতে এই উপাদানের দৌলতে আমরা একেবারে নতুন ধরনের সারফেস পাচ্ছি৷’
নতুন প্রজন্মের রিসাইক্লিং-প্লাস্টার এমন দেখতে হবে৷ মাঝে একফালি ঘাস ও জল ঝরার উপায় থাকবে৷ অনেক ক্রেতাই এখন এমন সমাধানসূত্র চাইছেন৷ সে কারণে কংক্রিট শিল্পের জন্য এই বাজারে বিপুল বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে৷