'প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক স্কোরকার্ড।' এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন আইএমএফ প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। ভারত, ব্রাজিলের মতো ব্রিক্সের সদস্য দেশগুলির উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তাঁর লক্ষ্য মার্কিন উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্য উন্নত করা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতিকেই 'নেতিবাচক' হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। তাঁর মতে, নয়া শুল্ক চালু হওয়ার ছয় মাস পরেও মার্কিন অর্থনীতিতে কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এক্স বার্তায় গোপীনাথ বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মার্কিন উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল, তবে বাস্তবে এই শুল্ক মার্কিন কোম্পানি এবং ভোক্তাদের উপর একটি করের মতো প্রভাব ফেলেছে। তাঁর কথায়, 'লিবারেশন ডে’ শুল্ক চালু হওয়ার ছয় মাস হল। এই শুল্কের ফলে কী ফলাফল মিলেছে?
১. সরকারের আয়ের জন্য হ্যাঁ, কিছুটা। কিন্তু মূলত মার্কিন কোম্পানিগুলির উপর বোঝা এসেছে এবং কিছু অংশ ভোক্তাদেরও দিতে হয়েছে। শুল্ক মূলত করের মতো কাজ করেছে। ২. মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে হোম অ্যাপ্লায়েন্স, আসবাবপত্র ও কফিতে।
৩. তবে বাণিজ্য ঘাটতি উন্নত হয়েছে কিনা, তার কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
৪. মার্কিন উৎপাদন শিল্প উন্নত? এখনও পর্যন্ত এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
সামগ্রিকভাবে, স্কোরকার্ড নেতিবাচক।'
গোপীনাথের বিশ্লেষণে স্পষ্ট, শুল্ক নীতির মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতির প্রতিশ্রুত সুফল আসেনি, বরং সাধারণ মানুষ এবং কোম্পানির উপর অতিরিক্ত বোঝা পড়েছে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব অর্থনীতি অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে এবং এই পরিবর্তনের মূল কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক নীতি। গীতার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধারের চেয়ে জটিল ও বিপজ্জনক। কোভিড-১৯ সংকটকালে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সম্মিলিতভৱে সুদের হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকিতে তেমন কোনও সম্মিলিত পদক্ষেপ সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ট্রাম্প প্রশাসন যে ভাবে একতরফা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি যথাযথভাবে নীতিনির্ধারণ করা নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছে। তাদের পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। গীতার ভাষায়, শুধু সুদের হার কমিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদায় গতি আনার সুযোগ তাদের নেই। কারণ, মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উচ্চ সুদের হার ধরে রাখতে হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার তুলনামূলকভাবে উচ্চপর্যায়েই রেখেছে। ফলে অনেক দেশই সুদ না কমাতে কিংবা উল্টো বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতের উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে শুল্ক চাপিয়েছিল ২৫ শতাংশ। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জরিমানা স্বরূপ আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ব্রাজিলের উপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক চাপিয়েছে ৫০ শতাংশ।