গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময়ই সন্দেহ হয়েছিল বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শুল্কযুক্ত কোনও পণ্য আপনার কাছে আছে?কিন্তু অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন না। কিন্তু মেটাল ডিটেক্টর স্ক্যানারে সব ধরে পড়ে যায়। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। অভিনেত্রীর ব্যাগ থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেখা যায়, কোমর এবং ঊরুতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়া সোনার বার। শুধু তাই নয়, অভিনেত্রীর জুতো এবং জামার পকেট থেকেও সোনা উদ্ধার হয়। গ্রেফতারির নথিতে রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে'র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের তদন্তে জানা গিয়েছে যে দুবাইয়ের কাস্টমসে সোনা নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের জেনেভা যাওয়ার কথা বলেছিলেন রানিয়া। কিন্তু পরে পরিকল্পনা বদলে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর এবং ২০ ডিসেম্বর তিনি দুবাই থেকে সোনা কিনেছিলেন বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে সোনা পাচারের কথা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন রানিয়া। জানিয়েছেন, আগেও দু’বার দুবাই থেকে সোনা আনার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত রানিয়ার বিরুদ্ধে ৪.৮৩ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তবে অভিনেত্রীর দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় এই কাজ করেননি। তবে রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর এসব মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, রানিয়া শুধু বাহক নন, সোনা পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্যও।
গ্রেফতারির নথি অনুযায়ী, গত বছর ১৩ নভেম্বর এবং ২০ ডিসেম্বর দুবাই থেকে সোনা কিনে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন রানিয়া। কিন্তু কোনওবারই ভারতে আসার কথা দুবাইয়ের শুল্ক দফতরকে জানাননি। সেখানকার কর্মকর্তাদের জানান, তিনি যাবেন জেনেভায়। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট বলছে, দু’বারই তিনি সোনা নিয়ে এসেছেন ভারতে। ডিআরআইয়ের দাবি, প্রায় চার কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন অভিনেত্রী। রানিয়াকে গ্রেফতারের পর তাঁর বেঙ্গালুরুর বাড়িতেও অভিযান চালায় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর। তল্লাশিতে ২.০৬ কোটি টাকার সোনার গয়না এবং নগদ ২.৬৭ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। রানিয়ার স্বামী যতীন হুক্কেরিও প্রায়ই দুবাই যাতায়াত করতেন। সোনা পাচার চক্রের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী অফিসাররা।
গত ৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কোটি টাকার সোনা-সহ গ্রেফতার হন রানিয়া রাও। গ্রেফতারির পর গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া বয়ানে অভিনেত্রী স্বীকার করেন, ১৭টি সোনার বার নিয়ে দুবাই থেকে এসেছিলেন তিনি। শুধু দুবাই নয়, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেছেন। তাঁর পাসপোর্টেও রয়েছে নানা দেশে ভ্রমণের ইতিহাস। কিন্তু কেন এত বার তিনি বিদেশযাত্রা করেছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভিনেত্রীকে নিজেদের হেফজাতে রেখে জেরা করছে রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ (ডিআরআই)।
উল্লেখ্য, অভিনেত্রীর বাবা রামচন্দ্র রাও একজন আইপিএস অফিসার। বছর কয়েক আগে ম্যাইসুরুতে একটি সোনা পাচারের মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁরও। এবার ওই অফিসারের কন্যাই ধরা পড়লেন সোনা পাচার মামলায়।