চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বা অন্যান্য অভিযোগকে ঘিরে প্রায়ই রোগী পরিবারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন চিকিৎসকরা সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা কর্তব্যরত অবস্থায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, যার সংখ্যা হল ৬৮.২ শতাংশ। গোয়া মেডিক্যাল কলেজের (জিএমসি) কমিউনিটি সোশ্যাল মেডিসিন বিভাগের একটি গবেষণা করেছে। তাতেই এই তথ্য সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকের উপর পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদ জানাল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন
গবেষণায় দেখা গিয়ে, গোয়ায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হিংসার সামগ্রিক ৩৮.৫ শতাংশ ঘটেছে। যার মধ্যে ২০-৩০ বছর বয়সিদের লক্ষ্য করে সর্বাধিক ৬৩.৪ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে। কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রান্ত হওয়া ডাক্তারদের প্রায় অর্ধেক (৫১.১ শতাংশ) ছিলেন মহিলা এবং পুরুষ চিকিৎসকদের সংখ্যা ছিল ৪৮.৯ শতাংশ। জানা যায়, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়া নাদিয়া এনএসআর গোডিনহো এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান জগদীশ এ ক্যাকোডকার একটি গবেষণা চালান। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়েছিল। ডাক্তারদের উপর হিংসার ঘটনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের ওপর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব এবং রোগীর যত্নের মানের উপর এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে গবেষণায়। এতে রাজ্যের ২৭০ জন চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। গবেষণাটি ২০২৪ সালে হেলথলাইন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছিল।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোগীর আত্মীয়স্বজন বা অন্যদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা। গবেষণায় এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার অর্থাৎ চিকিৎসকদের সুরক্ষার দাবি জানানো হয়।গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩৬.২ শতাংশ চিকিৎসক মৌখিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন এবং ৭ শতাংশ চিকিৎসক হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তাতে সাক্ষাৎকার নেওয়া অর্ধেক চিকিৎসক বলেছেন, যে নির্যাতন তাদের মানসিকতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু, তারা রোগীর যত্ন নিতে কখনই গাফিলতি করেননি।
এতে আরও বলা হয়েছে, যে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে বেশি হামলার শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের আত্মীয়স্বজনরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে, রোগীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নন এমন ব্যক্তিরাও জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন সংগঠনও ছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রে, সহকর্মীদের মাধ্যমেও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের খবর পাওয়া গিয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, এই ঘটনাটগুলির মধ্যে মাত্র অর্ধেকই উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে মাত্র ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছে।