বিমুদ্রাকরণ বা নোট বাতিলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি 'বেআইনি', আজ নিজের রায়তে এমনই জানালেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্না। উল্লেখ্য, ৫৮টি মামলার প্রেক্ষিতে আজ রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে গলদ ছিল না। তবে বেঞ্চের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে একমাত্র বিচারপতি নাগারত্না নিজের রায়তে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ছিল। তাঁর রায়, ১০০০ ও ৫০০ টাকার সমস্ত নোট নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে না কেন্দ্র। তবে ৪-১ ব্যবধানে কেন্দ্রের নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল।
এদিন বিচারপতি নাগারত্না বলেন, 'আমার বিবেচনায়, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোট বাতিলের পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা বেআইনি ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের এত পরে আগের সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে ২০১৬ সালে বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ ছিল মাত্র। সেই সিদ্ধান্ত আইনের পরিপন্থী এবং তাই তা অবৈধ।' তিনি তাঁর রায়তে আরও বলেন, 'নিঃসন্দেহে নো বাতিলের সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশে নেওয়া হয়েছিল। তবে শুধু মাত্র আইনি দৃষ্টিতে দেখতে গেলে নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি।' প্রসঙ্গত, মামলাকারীদের আইনজীবী পি চিদরম্বম দাবি করেছিলেন, নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরবিআই-এর পরামর্শ নিতে হয় কেন্দ্রকে। তবে এই ক্ষেত্রে নাকি আরবিআই-এর সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠকের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ সন্ধ্যায় দেশের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ৫৮টি মামলা রুজু হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই সব মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছিল গতবছর। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ আবদুল নাজিরের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। সেই সব মামলার প্রেক্ষিতে আজ রায়দান করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নাগারত্না ছাড়া বেঞ্চের চার বিচারপতির অবশ্য মত, শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কেবলমাত্র কেন্দ্র নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই তা বাতিল করা যায় না।
প্রসঙ্গত, নোট বাতিলের সময় ১৭.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নোট ছিল বাজারে। এর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের মূল্য ছিল ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকার ৯৮.৯ শতাংশ বা ১৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকার নোটই ফিরে আসে ব্যাঙ্কগুলির কাছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট রাতারাতি বাতিল করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কালো টাকা রোধ করতেই সেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে সরকারের সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা। যদিও সরকারের বক্তব্য ছিল, নোট বাতিলের কারণে জনসাধারণের কষ্ট হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলকে ত্রুটিপূর্ণ বলা যেতে পারে না।