সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা বা ৯০ ঘণ্টা কাজ করা নিয়ে কর্পোরেট আইটি সেক্টরের শীর্ষ কর্তাদের মন্তব্যে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এই আবহে সংসদে সম্প্রতি প্রশ্ন তোলা হয়, দেশে কি সাপ্তাহিক ৭০ কি ৯০ ঘণ্টা কাজের নিয়ম চালু হতে চলেছে? এই প্রশ্নের জবাবে সরকার সরাসরি জানিয়ে দিল, এমন কোনও নিয়ম দেশে চালু হচ্ছে না। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে লোকসভায় লিখিত উত্তরে বলেছেন, 'সপ্তাহে সর্বাধিক কাজের সময় ৭০ বা ৯০ ঘণ্টা করার এমন কোনও প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন নয়।' (আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ডের 'ছোট, অন্যায্য' পরিমাণ এড়িয়ে গিয়ে বিপাকে? কী করবেন…)
আরও পড়ুন: জারি ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’, এবার মার্কিন পণ্যের ওপর পালটা শুল্ক চাপাল চিন
বিগত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যনের '৯০ ঘণ্টা কাজ' মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জারি আছে। এই নিয়ে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সেই মন্তব্যের জন্যে সামলোচিত হয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন। এর আগে সপ্তাহে '৭০ ঘণ্টা' কাজ করার কথা বলে চর্চার পাত্র হয়েছিলেন ইনফোসিস সহপ্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তিও। (আরও পড়ুন: ২০৫ ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়ে 'অবৈধ অভিবাসীদের' সতর্কবার্তা মার্কিন দূতাবাসের)
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ চলাকালীন সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর মতো মাল্টি-বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি সংস্থা এখনও কর্মীদের শনিবার কাজ করাচ্ছে? তার জবাবে সুব্রহ্মণ্যন নাকি বলেছিলেন, 'আমার এটা ভেবে অনুশোচনা হচ্ছে যে আমি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারছি না। আমি যদি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারতাম, তাহলে আমি খুশি হতাম। কারণ, আমি রবিবার কাজ করি। বাড়িতে বসে আপনারা কী করবেন? কতক্ষণ নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? ধুর, অফিসে চলে যান। কাজ করুন।' এরপরই সুব্রহ্মণ্যন তাঁর এক অভিজ্ঞতা কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে বলেন, 'একবার এক চিনা ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, চিন অনায়াসেই আমেরিকাকে হারিয়ে দিতে পারে। কারণ, চিনারা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করেন। সেখানে মার্কিনিরা সপ্তাহে মাত্র ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। তাই আপনাকে যদি বিশ্বের সেরা হতে হয়, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা করে কাজ করতেই হবে। আপনারা সেটা শুরু করে দিন।' পরে সুব্রহ্মণ্যনের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবং অনেক শিল্পপতি এই নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।
পরে এই বিতর্ক নিয়ে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর হিউম্যান রিসোর্স প্রধান সোনিকা মুরলীধরন দাবি করেন, সংস্থার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ওই মন্তব্যের আগে কী বলেছেন, পরে কী বলেছেন, সেইসব বিবেচনা না করেই তাঁকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করা হচ্ছে। কখনওই সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের ‘নিদান’ দেননি বা ঘুরিয়েও সেটা বলতে চাননি। একেবারে হালকা চালে সুব্রহ্মণ্যন সেই মন্তব্য করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সোনিকা। সোনিকার কথায়, 'উনি প্রত্যেক কর্মীকে নিজের বর্ধিত পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। একতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বোধ জাগিয়ে তোলেন, যা আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় বিরল।' তবে তাতেও বিতর্ক থামার নাম নেই। আর এবার এই নিয়ে প্রশ্ন উঠল সংসদেও।