বিনাটিকিটে রেলভ্রমণে শাস্তির তালিকা থেকে হাজতবাস তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করল ভারতীয় রেল। তার বদলে শুধুমাত্র আর্থিক জরিমানা ধার্য করার রীতি চালু করতে চায় রেল।
আদালতের ওপর চাপ কমাতে সম্প্রতি রেলওয়ে আইন বেশ কিছু সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন। এর মধ্যে বিনা টিকিটে রেলভ্রমণে জেলযাত্রার নিদান ছাড়াও রয়েছে ১৯৮৯ সালের রেলওয়ে আইনে ভিক্ষা করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার মতো বিষয়।
বুধবার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (RPF) ডিরেক্টর জেনারেল অরুণ কুমার জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের ছোটখাটো অপরাধ খতিয়ে দেখতে সমস্ত মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ক্যাবিনেট সচিব। মন্ত্রকের স্বার্থেই আমরা বর্তমান আইনের নানান খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছি।’
রেলওয়ে চত্বর ও ট্রেনে যাত্রী ও তাঁদের মালপত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে RPF ও GRP, যার মধ্যে ছোটখাটো অপরাধে গ্রেফতারি ও আইনি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব RPF-এর। বর্তমমান ব্যবস্থায় রেলওয়ের অধীনে থাকা এলাকায় ছোটখাটো অপরাধের শাস্তি হিসেবে ধার্য রয়েছে আর্থিক জরিমানা এবং হাজতবাস, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই দুইয়ের মিশ্র প্রয়োগও।
এর মধ্যে বিনা কারণে রেলকামরার চেন টানার অপরাধে হাজতবাসের ব্যবস্থা, বিনা অনুমতিতে রেলভ্রমণ, রেলের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ এবং সংরক্ষিত রেলকামরায় অনুমোদন ছাড়া প্রবেশের অপরাধেও হাজতবাসের শাস্তি বলবৎ না করার প্রস্তাব রয়েছে মন্ত্রকের। জানা গিয়েছে, রেলওয়ে আইনের মোট ১৬টি ধারা সংশোধনের পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের।
এর মধ্যে রয়েছে, ১৩৭ ধারা (বৈধ নথিপত্র বা পাস ছাড়া রেলভ্রমণ), ১৪১ ধারা (বিনা কারণে চেন টানা), ১৪৪ ধারা (পণ্য ফেরি করা), ১৪৫ ধারা (অশালীন আচরণ করা), ১৪৭ ধারা (অনধিকার প্রবেশ এবং তা থেকে বিরত থাকতে ব্যর্থ হওয়া), ১৫৭ ধারা (টিকিট বা রেলের পাস বিকৃত বা অবৈধ সংশোধন করা), ১৫৯ ধারা (রেলের এলাকায় চালকদের নির্দেশ অমান্য করা), ১৬২ ধারা (মহিলা কামরায় অবৈধ ভ্রমণ), ১৬৬ ধারা (আবর্জনা সৃষ্টি করা) এবং ১৬৭ ধারা (যাত্রী এলাকায় ধূমপান করা)।
আইন সংশোধনের বিষয়ে রেল আধিকারিকদের মতামত জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, রেলওয়ে আইনে বর্তমানে ৩৭টি শাস্তিযোগ্য অপরাধ তালিকাভুক্ত রয়েছে।
RPF-এর পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে বিনা কারণে চেন টানার ঘটনা ঘটেছে ৫৫,৩৭৩টি। গটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৫,৭৮৪ জনকে এবং তাঁদের মধ্যে ৪৩,৯৫১ জনের আদালতে বিচার হয়েছে।