আটক করার পর সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছে ইজরায়েল। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন গাজা অভিমুখী নৌবহরে গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারীরা। গত বুধবার ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হবার পর শনিবার ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৩৭ জন আন্দোলনকারীকে। তারপরেই প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
মালয়েশীয় কর্মী হাজওয়ানি হেলমি এবং মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিভার রয়টার্সকে বলেন, থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে ইজরায়েলি পতাকা হাতে প্যারেড করানো হয়। হেলমির কথায়, 'আমাদের পরিষ্কার পানীয় জল ও ওষুধ পর্যন্ত দেয়নি ইজরায়েলি বাহিনী। বিভার আরও অভিযোগ করেন, 'থুনবার্গের সঙ্গে ভয়ঙ্কর আচরণ করা হয় এবং সেটি রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়।' তিনি জানান, ইজরায়েলের চরমপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন-গভির প্রবেশ করলে থুনবার্গকে একটি ঘরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে তুরস্কের সাংবাদিক এবং গ্লোবাল সামাদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া এরসিন সেলিক জানিয়েছেন, ইজরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গের উপর অত্যাচার করেছে। তাঁকে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলা হয় এবং ইজরায়েলি পতাকা চুম্বন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ফ্লোটিলায় থাকা অন্য এক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, আটক থাকার সময় তাঁদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁদের তিনদিন খাবার, পানীয় জল কিছুই দেওয়া হয়নি। তাঁদের সঙ্গে কুকুরের মত আচরণ করেছে ইজরায়েলি বাহিনী। তিনি আরও জানান, ইজরায়েলি বাহিনীর এই আচরণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তারা গাজার মানুষের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করছে।
যদিও ইজরায়েল এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এর আগে ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রক বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের খবরকে 'সম্পূর্ণ মিথ্যা' বলে খারিজ করে দিয়েছিল।তারা বলেছে, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আইন অনুসারে আচরণ করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, সমস্ত দাবি মিথ্যা। অবশ্যই সমস্ত আটক ব্যক্তিকে পানীয় জল, খাবার এবং শৌচাগারের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাদের আইনি পরামর্শের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। এদিকে তুরস্কের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, শনিবার যে ১৩৭ জন আন্দোলনকারীকে ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে সেই দলে ছিলেন তুরস্কের সাংবাদিক। ওই দলে তুরস্কের ৩৬ জন নাগরিক ছাড়াও ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, লিবিয়া, জর্ডন, ইতালির আন্দোলনকারীরা। ইতালির বিদেশমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানান, এখনও পর্যন্ত ২৬ জন ইতালিয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফ্লোটিলায় থাকা আরও ১৫ জন ইতালিয় এখনও ইজরায়েলি কব্জায় রয়েছেন। ফ্লোটিলায় থাকা ইতালির এক আইনি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে মৌখিক এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানীয় জল, খাবার কিছুই দেওয়া হয়নি। একদম শেষের দিকে গ্রেটা থুনবার্গের হাতে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে ইজরায়েলি বাহিনী। যে ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
বিভিন্ন দেশের ৪৩৭ জন আন্দোলনকারী ৪০টির বেশি ছোটো জাহাজে করে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। এই দলে ছিলেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-সহ বিভিন্ন দেশের সাংসদ, সমাজকর্মী, আইনজীবী, পরিবেশকর্মীরা। গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর পাশাপাশি গত ১৬ বছর ধরে গাজার সামুদ্রিক পথে যে অবরোধ চালাচ্ছে ইজরায়েল তা ভেঙে গাজায় প্রবেশ করার লক্ষ্যেই এই যাত্রা শুরু হয়। গ্লোবাল সামাদ ফ্লোটিলা নামের এই অভিযানে অংশ নেওয়া সমস্ত জাহাজ এবং তাতে থাকা আন্দোলনকারীদের গত বুধবার থেকে আটক করা শুরু করে ইজরায়েল। এই ঘটনায় ইজরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে পড়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, এই ঘটনা গাজায় ইজরায়েলের দেওয়া অবরোধের অবৈধতাকে তুলে ধরেছে, যা যুদ্ধের সময় সেখানকার ২৩ লক্ষ বাসিন্দাকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।