বাস্তবের সামনে সুর নরম করতে বাধ্য হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নয়া মন্তব্যে তেমন কোনও ইঙ্গিত মিলল না। বরং যে কড়াকড়ি শুরু করতে চলেছেন, তাতেই অনড় থাকলেন। হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, শুধু ইঞ্জিনিয়ার নন, সবক্ষেত্রেই দক্ষ কর্মচারীদের এইচ-১বি ভিসা প্রদান করতে আপত্তি নেই তাঁর প্রশাসনের। হোটেলকর্মী হোক বা ওয়াইন বিশেষজ্ঞ হোক - সবক্ষেত্রেই দক্ষ কর্মচারীরা আমেরিকায় এলে তাঁর কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
শুধু ইঞ্জিনিয়ার নন, সকল ক্ষেত্রেই দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, বললেন ট্রাম্প
মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘আমি দু'পক্ষেরই যুক্তি শুনতেই পছন্দ করি। কিন্তু আমি এটাও চাই যে খুব যোগ্য লোকেরা আমাদের দেশে আসুক। এমনকী যাঁদের প্রশিক্ষণ বা যোগ্যতা নেই, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে আসা এবং সাহায্য করতে আসা লোকজনদের নিয়েও (আমার কোনও আপত্তি নেই)। আমি শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের কথা বলছি না। আমি সর্বস্তরের লোকেদের কথা বলছি।’
যে এইচ-১বি ভিসার মূল সুবিধা পান ভারতীয়রা। সেই ভিসার সুবাদে ভারতের প্রতিভাবান কর্মীরা আমেরিকায় গিয়ে কাজ করেন। প্রতি বছর হাজার-হাজার ভারতীয়কে নিয়োগ করে থাকে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থা। তার ফলে এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি হলে দক্ষ কর্মচারীদের ভারতীয়দের উপরে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আমেরিকায় দক্ষ কর্মচারীর চাহিদা
এমনিতে একাধিক মহলের দাবি, দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি মহল। মার্কিন শ্রম বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে আমেরিকার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ১২ লাখ কর্মচারীর (১.২ মিলিয়ন) অভাব হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ লাখ প্রযুক্তিবিদ লাগবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আমেরিকায় দক্ষ ঘরোয়া কর্মচারীদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে ক্রমশ দক্ষ বিদেশি কর্মীদের উপরে আমেরিকার নির্ভরশীলতা বদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩৩ সালের মধ্যে আমেরিকার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লাখ হয়ে যাবে। সেই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নতির গ্রাফ বজায় রাখতে এইচ-১বি ভিসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।
দক্ষ হলে তবেই H-1B ভিসা মিলবে, বার্তা ট্রাম্পের
সেই আবহেই মঙ্গলবার (মার্কিন সময় অনুযায়ী) ওরাকেলের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ল্যারি এলিসন, সফটব্যাঙ্কের সিইও মাসায়োশি সন এবং ওপেন এআই সিইও স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এইচ-১বি ভিসার বিষয়ে তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু তিনি যে বিষয়টা বলতে চাইছেন, সেটা হল যে দক্ষ কর্মচারীদের সেই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। আর সংশ্লিষ্ট দক্ষ কর্মচারী যে কোনও ক্ষেত্রের হতে পারেন বলে জানিয়েছেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তারইমধ্যে ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার যে নিয়ম ছিল, সেটার ক্ষেত্রে পিছু হটছেন না। আগে বাবা-মা যে দেশের নাগরিক হোক না কেন, সন্তান যদি আমেরিকায় জন্মায়, তাহলে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে। সেই নিয়ম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের আমলে।