দেড় বছর আগেই তাঁর সরকারকে ফেলার পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন শচীন পাইলট। সেই কারণে ১৮ মাস আগে থেকেই উপ-মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।
এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেহলট জানিয়েছেন, ‘গত দেড় বছর ধরে আমাদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি। একজন মন্ত্রী তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বললে, তাঁর পরামর্শ না নিলে ও তাঁর সঙ্গে সমস্ত রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আর কী বোঝার বাকি থাকে! বৈপরীত্য থাকতেই পারে কিন্তু গণতন্ত্রে বাক্যালাপ প্রয়োজন।’
গেহলটের দাবি, ২০১৮ সালে সরকার গড়ার পর থেকেই তা ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন শচীন পাইলট। তাঁর আরও দাবি, ১০০ জন বিধায়কের সমর্থন তাঁর রয়েছে, যেখানে পাইলটের সমর্থক মাত্র ১২-১৫ জন বিধায়ক।
তবে গোটা ঘটনাই যে অত্যন্ত দুঃখজনক, তা জানিয়ে গেহলট বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ঝামেলা নিজেদের মধ্যেই মিটমাট করে নেওয়া যেত। তিনি খেদোক্তি করেন, ‘তুমি যদি বিপক্ষের সঙ্গে যুক্তি করে রাজনীতি কর, তাহলে গণতন্ত্রের আর কী অবশিষ্ট থাকে!’
পাইলটের উদ্দেশে স্পেশ্যাল অপারেশনস গ্রুপের (এসওজি) জারি করা নোটিশ সম্পর্কে গেহলট জানান, । তিনিও এমন নোটিশ পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘অভিযোগকারী আমাদের দল, এবং আমাদের ১০-১২ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শুধু ওঁর নাম নেওয়া হয়নি। আমরা বলেছি, সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য বিজেপি ষড়যন্ত্র করেছিল। উনি কেন ব্যাখ্যা করে বেড়াচ্ছেন?’
পাইলট ও তাঁর সমর্থক বিধায়করা পালানোর চেষ্টা করলে তিনি রুখে দেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে গেহলটের দাবি, পাইলট প্রথমে বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সমর্থক বিধায়করা বেঁকে বসায় তা পারেননি। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে রাজস্থানে কংগ্রেসকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন পাইলট।
প্রাক্তন সহকর্মী ও মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস ত্যাগ করে যাওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার প্রসঙ্গ টেনে গেহলট বলেন, ‘দল তোমায় এত কিছু দিয়েছে। সেই দলের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা কোর না।’
শচীন প্রসঙ্গে নতুন প্রজন্মের একহাত নিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তিন বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছি, তিন বার প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান হয়েছি, তিন বার কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক হয়েছি এবং তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি কারণ আমি NSUI ও যুব কংগ্রেস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। আমাদের প্রজন্মের নেতারা কঠোর পরিশ্রম করেন এবং দল ও তার আদর্শের প্রতি আজীবন বিশ্বস্ত থাকেন, আর সেই জন্যই আমরা এখন যেখানে পৌঁছানোর সেখানে পৌঁছেছি।’
পাইলট যদি এবার কংগ্রেসে ফিরতে চান, তা হলে তাঁর কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, জানতে চাইলে গেহলট বলেন, ‘আমি যখন প্রথম সাংসদ হই, ওঁর তখন তিন বছর বয়স। ওঁর পরিবারের সঙ্গে আমার দীর্ঘ কয়েক দশকের সম্পর্ক। আমি ওঁকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানাব।’
তবে তিনি শুনিয়ে ছাড়েননি যে, রাজনীতির রুক্ষ পথে না হেঁটে স্রেফ বাবার মৃত্যুর জেরে রাতারাতি নেতা হয়ে যাওয়া নেতাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি শূন্য থাকার কারণেই এমন হঠকারিতা করে বসেন। তবে তাঁর এই মতবাদ স্বয়ং রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কি না, সে প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজস্থানের ধুরন্ধর কংগ্রেস নেতা।