ভারতের গণতন্ত্রের উৎসব উদযাপনের দিবস হিসাবে যে দিনটিকে ধরা হয়, সেই ২৬ জানুয়ারি ২০২২-এ যখন সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত উৎসবে মুখরিত, তখন ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় যোগ দিয়ে কার্যত মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর হন হামিদ আনসারি। ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি দেশের মানবাধিকারের পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওই অনুষ্ঠানে। আর তাঁর বক্তব্যের পরই দোলাচল শুরু হয়েছে দিল্লির রাজনীতিতে।
হামিদ আনসারি ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে ছিলেন চার মার্কিনি রাজনীতিবিদও। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে সিভিক ন্যাশনালিজম'কে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার জায়গায় একটি কল্পনাধর্মী 'কালচালার ন্যাশনালিজম' তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, বলে মত প্রকাশ করেন হামিদ আনসারি। অর্থাৎ নাগরিক জাতিয়তাবাদকে সরিয়ে সাংস্কৃতিক জাতিয়তাবাদ জায়গা দখল করছে বলে বক্তব্য রাখেন হামিদ আনসারি। উল্লেখ্য, দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির পরিচিতি ছাড়াও দেশের সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য ও ভারতের নামী কূটনীতিবিদ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে হামিদ আনসারির। রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করা নিয়েও এদিন বক্তব্য রাখেন ভারতের এই প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক ক্ষনতা পেতে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচনী সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে নাগরিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। সামনে আসছে অসহিষ্ণুতার মানসিকতা।' এরই সঙ্গে তিনি বলেন, 'একটি পক্ষের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা চলছে। অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রচার চলছে।... এই প্রবণতার সঙ্গে লড়তে হবে আমাদের। জবাবা দিতে হবে আইনি ও রাজনৈতিক পথে।'
এই অনুষ্ঠানে মার্কিন ডেমোক্রেটিক সেনেটর এড মার্কে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জিম ম্যাকগভার্ন, অ্যান্ডি লেভিন জেমি রাসকিন। উল্লেখ্য, জিম ম্যাকগভার্ন, অ্যান্ডি লেভিন জেমি রাসকিনকে বহুকাল ধরেই দিল্লি বিরোধী নীতিতে চলতে দেখা গিয়েছে। এমনই দাবি একাধিক মহলের। এদিকে, ওয়াশিংটনের এই ভার্চুয়াল সভার যে অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি বক্তব্য রেখেছেন, সেই সভার সংগঠকদের সঙ্গে জামাত ই ইসলামি ও নিষিদ্ধ সংগঠন সিমির যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। ১৭ টি মার্কিন সংগঠন মিলে ইন্ডিয়ান- আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল গঠন করে এই সভা আয়োজন করা হয়েছিল। ইন্ডিয়ান- আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অজিত সাই জানিয়েছেন, 'সিমি বা পাকিস্তানের আইএসআই বা কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে ইন্ডিয়ান- আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের যোগের অভিযোগ নস্যাৎ করা হচ্ছে।' তবে অই অনুষ্ঠানে হামিদ আনসারির বক্তব্যের পর থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির তরফে একাধিক পাল্টা বার্তা উঠে এসেছে।