আজ প্রকাশিত হল হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ভোট। সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হতেই কংগ্রেস শিবিরে উল্লাস দেখা দিয়েছিল। তবে বেলা গড়াতেই সেই উল্লাস ম্লান হয়ে যায়। একটা সময়ে ৫০-এর বেশি আসনে এগিয়ে থাকা কংগ্রেস নেমে যায় ৪০-এর নীচে। এই আবহে ভোটের বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বিজেপি তৃতীয়বারের মতো হরিয়ানায় সরকার গড়তে পারে। এই আবহে বিশেষ অবদান আছে ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের। হরিয়ানায় বিজেপির পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল ওড়িশার ধর্মেন্দ্র প্রধান। আর সহ-পর্যবেক্ষক করা হয় বিপ্লব দেবকে। এই আবহে নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি থেকে শুরু করে জাতিগত সমীকরণের সামঞ্জস্য রেখে প্রার্থী বাছাই, সবই হয়েছে তাঁদের পর্যেক্ষণে। (আরও পড়ুন: গণনা শেষের আগে হার মানলেন মেহবুবার মেয়ে, কুলগামে ফের লাল ঝান্ডা ওড়ালেন তারিগামি)
আরও পড়ুন: অলিম্পিকের ব্যর্থতা পিছনে ফেলে রাজনৈতিক আখড়ায় দুর্দান্ত ফল ভিনেশের, জয় কত ভোটে?
আরও পড়ুন: টাকার অভাব বলেও চলতি বছরে ৪ বিধানসভা ভোটে ৫৮৫ কোটি খরচ কংগ্রেসের!
উল্লেখ্য, হরিয়ানায় লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হয়েছিল। মনোহরলাল খট্টরের বদলে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় নায়েব সাইনিকে। সেই পালা বদলের সময়ও হরিয়ানার সহ-পর্যবেক্ষক ছিলেন বিপ্লব দেব। আর হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিজেপি পর্যবেক্ষক করা হয় ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। এই আবহে হরিয়ানায় 'পিছিয়ে পড়েও বিজেপিকে এগিয়ে' নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব প্রাপ্য ধর্মেন্দ্র প্রধান সহ বিপ্ল দেবের। এর আগে ২০১৯ সালেও হরিয়ানায় নির্বাচনে বিজেপির হাল ধরেছিলেন ধর্মেন্দ্র প্রধান। ইস্তেহার তৈরি থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্ক কষা হয়েছিল ধর্মেন্দ্রর নজরে। এবারও ধর্মেন্দ্র সেই দায়িত্ব পালন করেছেন হরিয়ানায়। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিপ্লব দেব।
আরও পড়ুন: জম্মু ও কাশ্মীরে মুখ থুবড়ে পড়ল BJP, উপত্যকায় কোন কাঁটায় বিদ্ধ পদ্ম?
এর আগে লোকসভা ভোটের সময় দুষ্মন্ত চৌটালার জলের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙে বিজেপির। জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরার ফলে জাঠ ভোটব্যাঙ্কে যে ধাক্কা লাগতে পারে, সেটা পুষিয়ে নিতেই ওবিসি নেতা সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। হরিয়ানায় বিজেপির ব্রাহ্মণ, ব্যবসায়ী ও পঞ্জাবিদের ভোটব্যাঙ্ক এমনিতেই মজবুত। সেই মুখ্যমন্ত্রী বদলের অঙ্কে তাই নিজেদের 'ভোটব্যাঙ্ক' অক্ষত রাখতে চেয়েছিল বিজেপি। সেই পরিস্থিতিতে একজন ওবিসি নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি হরিয়ানার ওবিসি-সহ জাঠ ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে সক্ষম হয় বলে মনে করা হচ্ছে আজকের ফলাফলে।
উল্লেখ্য, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফলাফল বলছে, বিজেপি এগিয়ে বা জিতেছে ৫০টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে বা জয়ী ৩৫ আসনে। এদিকে আইএনএলডি এগিয়ে ১টি আসনে। বিএসপি এগিয়ে ১ আসনে। নির্দলরা এগিয়ে ৩টি আসনে। আর দুষ্মন্তের জেজেপি প্রায় নিশ্চিহ্ন হরিয়ানা থেকে। (আরও পড়ুন: মলদ্বীপকে ৬৩০০ কোটির সাহায্য ভারতের, মোদী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতায় গদগদ মুইজ্জু)
এদিকে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস প্রার্থী ভূপেন্দ্র সিং হুডা এগিয়ে আছেন গারহি সাম্পলা-কিলোই থেকে। এবার হরিয়ানায় কংগ্রেস জিতলে তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন বলে মনে করা হচ্ছিল। এর আগের ভোটে কংগ্রেস হারলেও হুডা নিজের আসনে জয়ী হয়েছিলেন। এই আবহে তিনি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা ছিলেন। অপরদিকে অলিম্পিকে ফাইনালে উঠেও নিয়মের ফেরে পদক হাতছাড়া হয় কুস্তিগির ভিনেশ ফোগটের। প্যারিস থেকে দেশে ফিরে কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি আবার রাজনীতিতে যোগ দেন। হরিয়ানা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জুলানা থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সেই আসন থেকে সকাল থেকেই এগিয়ে আছেন ভিনেশ। এর আগে মাঝখানে তিনি পিছিয়েও পড়েছিলেন। উল্লেখ্য, অলিম্পিকের আগে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ব্রিজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন ভিনেশরা। লোকসভা ভোটের আগে ২০২৪ সালের মার্চ মাসেই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল বিজেপি। মনোহরলাল খট্টরের জায়গায় গদিতে বসেছিলেন নায়েব সাইনি। এরপর নানান ঝড়ঝাপটার মাঝেও সরকার টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে দলের হাল খারাপ হলেও নায়েব সকাল থেকে নিজের আসনে এগিয়ে আছেন। এদিকে হরিয়ানার বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ পিছিয়ে পড়েছিলেন আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট থেকে। এরপরে মাঝে এগিয়েও গিয়েছিলেন তিনি। তবে ফের কিছু ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। এদিকে হরিয়ানার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালা নিজের আসনে প্রথম তিনজনের মধ্যেও নেই।