বিদেশি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে এখন থেকে বিদেশে অনুমোদিত ওষুধ ভারতে এলে আর নতুন করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, সব বিভাগের ওষুধের জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়নি। বিশেষ পাঁচটি বিভাগ এই নিয়মের অধীনে নির্বাচিত হয়েছে। মূলত, স্তন ক্যানসার ও লিউকোমিয়ার মতো ওষুধের ভারতে প্রবেশ সহজ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র জানিয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পরিচালিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যদি কোনও ওষুধ সফল বলে বিবেচিত হয় এবং সেখানকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই ওষুধগুলোকে অনুমোদন দিয়ে দেয়, তবে ভারত সেই ওষুধ এলে, তা বাজারজাত করতে পারে আর ক্লিনিকাল ট্রায়াল দিতে হবে না। এর অর্থ গুরুতর রোগের ওষুধও সরাসরি ভারতে বিক্রি করা যেতে পারে।
এই নতুন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেছেন, আগে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যখন নামকরা সংস্থাগুলি, ভারতের বাজারে একটি নতুন ওষুধের প্রবর্তনে বিলম্বের মুখোমুখি হয়েছিল। স্থানীয় ট্রায়াল পরিচালনা করতে পারেনি বা সম্পূর্ণ করতে পারেনি বলে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো ভারতীয় বাজারে চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই অধিকর্তাদের দাবি, এর জন্য, আমরা বাকি রোগী/জনসংখ্যাকে বঞ্চিত করতে চাইনি যাঁদের সেই ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোন কোন বিভাগের ওষুধ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের হাত থেকে রেহাই পাবে
উল্লেখ্য, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র পাঁচটি বিভাগে। এর মধ্যে রয়েছে বিরল রোগের ওষুধ, জিন এবং সেলুলার থেরাপির ওষুধ, মহামারী পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য নতুন ওষুধ, বিশেষ প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে নতুন ওষুধ এবং উল্লেখযোগ্য ক্লিনিকাল অগ্রগতি সহ নতুন ওষুধ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত ক্যানসার, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) এবং ডুচেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি (ডিএমএ) এর মতো বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য তাড়াতাড়ি ওষুধ পেতে সাহায্য করবে।
উশালক্ষ্মী সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় না। আর সরকারের এই নতুন নীতির সাহায্যে, এই ওষুধটি শীঘ্রই ভারতের বাজারে আসতে পারে৷
আরও পড়ুন: (স্টিয়ারিং বক্সের বড় ত্রুটির মুখে Maruti Alto! কীভাবে বুঝবেন আপনার গাড়িটি ঠিক আছে কিনা)
ক্লিনিক্যাল রিসার্চ এর পেশেন্ট অ্যাডভোকেটস, প্রজেক্ট লিড ডাঃ পূজা শর্মা বলেছেন যে ভারতে বিদেশি ওষুধ বাজারজাত করার পিছনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নিয়ম রাখা হয়েছিল, যাতে এই ওষুধগুলো রোগীর শরীরে জেনেটিক, বিপাকীয় সহ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তবে, এখন পাঁচ বিভাগ থেকে এই নিয়ম উঠে যাওয়ার মানে এই নয় যে কোনও ঝুঁকি বাড়বে, কারণ নিয়ন্ত্রক নজরদারি এবং পোস্ট-মার্কেটিং ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে বিপণন-পরবর্তী নজরদারি নিশ্চিত করবে।
আরও পড়ুন: (Waqf Board Bill: কল্যাণও আছেন, অভিজিৎও আছেন, ওয়াকফ বিলের পর্যালোচনায় তৈরি হল ২১জনের যৌথ সংসদীয় কমিটি)
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত খরচ কমবে
কেন্দ্রের এই নিয়মের জন্য, অনেক উন্নত ওষুধের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং আয়ুষ্মান ভারত-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে সরকারগুলির পাবলিক খরচও যথেষ্ট কমবে। এরই সঙ্গে আরও একটি সুবিধা হবে। তা হলে, এতদিন ধরে ভারতে ক্লিনিকাল ট্রায়াল অনুমোদনের জন্য ব্যয় করা অর্থ, অন্য কোথাও ব্যবহার করা যেতে পারে।