ইসকনকে 'উগ্রবাদী সংগঠন' আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরব হল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যেই সংগঠনের বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষী হওয়ার অভিযোগ, যারা বাংলা নববর্ষের বিরোধিতা করে, তারাই অভিযোগ করছে, ইসকন সহ বাংলাদেশে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনে অনেক সন্ত্রাসবাদী আছে। এই আবহে দেশ জুড়ে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি চট্টগ্রামে বিশাল মিছিল করে হেফাজতে ইসলাম। এই মৌলবাদী সংগঠনের অভিযোগ, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম ও ইসকনের মদতে আইনজীবী সাইফুলকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এদিকে এই নিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনে স্মারকলিপি জমা দেবে বলে ঘোষণা করেছে। (আরও পড়ুন: নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ, বাংলাদেশে গ্রেফতার হিন্দু নাবালক)
আরও পড়ুন: চিন্ময় প্রভুকে প্রসাদ দিতে গিয়ে আটক ২ সন্ন্যাসী, পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
এদিকে চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হারুন বিন ইজাহার বলেন, 'আমরা কোনও উগ্রবাদী সংগঠনের (ইসকন) সঙ্গে বসব না। আমাদের তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এক হচ্ছে এই সমস্ত হিন্দু সংগঠনকে ভারতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেটা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। তাদের বলতে হবে, বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানদের পাশাপাশি থেকে সহাবস্থানে নিরাপদে রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার চালানো সংবাদ মিথ্যা, ভুয়া, অপপ্রচার। তিন হচ্ছে আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে যেসব সন্ত্রাসী ঘাপটি মেরে রয়েছে, তাদের আপনারাই চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন। এই শর্তগুলি মানলে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।' (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অন্তত ৪ মন্দিরে হামলা, দুষ্কৃতীদের ধরার বেলায় '০' ইউনুসের পুলিশ)
আরও পড়ুন: উদ্বেগে ভাসছে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার, 'দায়িত্ববোধ' বোঝাতে বড় পদক্ষেপ ভারতের
উল্লেখ্য, এই হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের বিরুদ্ধে আল-কায়েদা যোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাদের সমাবেশে খবর করতে গিয়ে মার খেতে হয়েছিল এক নারী সাংবাদিককে। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে একটা সময়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন বাংলাদেশি নারীরা। প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার বিরোধী তারা। ২০১৩ সালে ঢাকা অবরোধের নামে বাংলাদেশের রাজধানীতে তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজত সদস্যরা। সেই সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের কর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ মোট ৪৭ জন নিহত হয়েছিল। এমনকী এই সংগঠন বাংলা নববর্ষকে 'বিজাতীয় সংস্কৃতি' বলে আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের দাবি করে আসছে বিগত বহু বছর ধরে। (আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশে যা হচ্ছে...', আবেগ ভরা মন্তব্য নওশাদের, বড় পদক্ষেপ তাঁর দলের)
প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল পরিস্থিতি।
এরই মাঝে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকোর্টে মামলা হলে তা খারিজ হয়ে যায়। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা সসৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি সরকারের মধ্যে। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারে কোনও আলোচনা হয়নি। অনেকে দাবি তুলতে পারে। জনগণ তাদের দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। তবে আমরা ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে সংগঠনের অপরাধকে মিলিয়ে ফেলছি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তিনি দোষী হতে পারেন বা নাও হতে পারেন তবে। সেটা আদালতের সিদ্ধান্ত। আজ আবার ইসকন একটি বিবৃতি দিয়েছে, যে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।'