‘সাজানো’, ‘ভুয়ো’ এনকাউন্টার নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনকাউন্টারের কিছুক্ষণ আগেই সাংবাদিকদের আটকানো, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ যত সামনে আসছে, তত প্যাঁচে পড়ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই অবস্থায় পুলিশের তরফে সাফাই দেওয়া হল, ‘অভিযুক্তকে (বিকাশ দুবে) জীবিত ধরার যাবতীয় চেষ্টা করা হয়েছিল।’
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে বিকাশকে কানপুরে নিয়ে আসছিল উত্তরপ্রদেশের এসটিএফের একটি দল। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে-পরের একাধিক ঘটনা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্নচিহ্ন উঠছে। বিরোধীরাও চেপে ধরেছেন। এই অবস্থায় পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের তরফে জানানো হয়, কানপুরের সচেন্দ্রী থানায় একটি হাসপাতালের সামনে পৌঁছাতে গাড়ির সামনে আচমকা গরু, মোষের দল চলে আসে। সেই পশুর পালকে বাঁচাতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন বলে দাবি পুলিশের। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ যাত্রায় (উজ্জয়িনী থেকে কানপুরের দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটারের মতো) ক্লান্ত চালক ওই পশুদের বাঁচাতে গিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং গাড়ি উলটে যায়।’
পুলিশের দাবি, গাড়িতে পাঁচজন পুলিশকর্মী কিছুক্ষণের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সেই সময় রমাকান্ত চৌধুরী নামে এক পুলিশকর্মীর সরকারি পিস্তল নিয়ে বিকাশ গাড়ি থেকে বেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে পালিয়ে যায়। এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অপর একটি গাড়ি। সেখানেই ছিলেন দলের নেতৃৃত্বে থাকা তেজবাহাদুর সিং। আহত পুলিশকর্মীদের থেকে পুরো বিষয়টি জেনে দ্বিতীয় গাড়ির পুলিশকর্মীরা বিকাশের পিছু ধাওয়া করে।
বিকাশ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও ‘অভিযুক্তকে জীবিত ধরার যাবতীয় প্রয়াসের জন্য বিকাশের একদম কাছে পৌঁছে যাওয়া হয়েছিল’ বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, বিকাশ ‘প্রচুর’ গুলি চালানোয় ‘আত্মরক্ষা’-য় ‘নিয়ন্ত্রিত’ গুলি চালানো হয়। তাতে আহত হয় বিকাশ। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তবে পুলিশের সেই সাফাই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। প্রথমত, পুলিশের দাবি মতো যদি ‘নিয়ন্ত্রিত’ গুলি চালানো হয়, তাহলে বিকাশের বুকে তিনটি এবং হাতে একটি বুলেট লাগল কীভাবে? প্রোটোকল অনুযায়ী তো পায়ে গুলি মারার কথা।
দ্বিতীয়ত, গাড়ি উলটে গেল, পুলিশকর্মীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লেন, বিকাশ পিস্তল ছিনিয়ে উলটে থাকা গাড়ি থেকে পালাল (সবাই অজ্ঞান হয়ে গেলেও বিকাশের চোট লেগেছিল কিনা বলা হয়নি, তবে সে পালানোর মতো অবস্থায় ছিল)। অথচ দ্বিতীয় গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীরা আহত পুলিশকর্মীদের থেকে জানতে পারলেন যে বিকাশ পালিয়েছে! বিশেষত দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির সামনের কাঁচে চিড় ধরলেও ভেঙে যায়নি, যেখান থেকে দ্বিতীয় গাড়ির নজর এড়িয়ে বিকাশ বেরিয়ে গিয়েছে বলে বলা যায় না (যদিও পুলিশের তরফে বলা হয়নি, কোথা পালিয়েছে বিকাশ)। সামনের জানালার কাঁচও মোটের উপর ঠিক ছিল, রীতিমতো ওয়াইপারও চলছিল (সেই ভিডিয়োও সামনে এসেছে)। ফলে বিকাশ গাড়ির পাশের দরজা দিয়েই বেরিয়ে থাকলে দ্বিতীয় গাড়ির নজরে পড়ল না কেন? তাহলে প্রথম এবং দ্বিতীয় গাড়ির মধ্যে দূরত্ব কত ছিল? কনভয়ে গাড়ির দূরত্ব তো সাধারণত বেশি হয় না। সেইসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিবৃতিতে মেলেনি।