চরম দারিদ্র আগেও ছিল। সেই সঙ্গে লকডাউনে কাজের অভাব। ঘরের ঘটিবাটি বিক্রির পর এবার কিডনিও বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। সুযোগ নিয়ে অসমে দেদার 'ব্যবসা' চালাচ্ছিল এক কিডনি চক্র। সম্প্রতি সেই চক্রের ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
অসমের মরিগাঁও জেলার দক্ষিণ ধর্মতুল গ্রাম। শিক্ষার অভাব ও অর্থাভাবকে হাতিয়ার করে সেখানেই দেদার ব্যবসা ফেঁদেছিল কিডনি চক্রের সদস্যরা। বুধবার কয়েকজন স্থানীয়ই অভিযুক্ত দালালসহ চারজনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের কিডনি বিক্রি করেছে এই চক্র।
অসমের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, অভিযুক্ত এজেন্টের নাম লিলিমাই বোডো। লিলিমাই গুয়াহাটির বাসিন্দা। ধর্মতুলে কিডনি বিক্রিতে ইচ্ছুক দরিদ্র লোকের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে সে। স্থানীয়দের অভিযোগ, লিলিমাই ৪-৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রির জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষদের প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন।
তবে এই ৪-৫ লক্ষ টাকাও পুরোটা পেতেন না কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তি। কমিশন হিসাবে দেড় লাখ টাকা দালাল নিয়ে নিত।
শ্রীকান্ত দাস নামে এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন যে তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য কিডনি বিক্রি করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকার লোভ দেখান হয়েছিল। তবে একটি কিডনি অপসারণের পরে হাতে পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা।
সম্ভবত এই কিডনিই কেনেন ধনী, বিত্তবান রোগীর পরিবার। সেখানে আবার অন্য দালালরা কাজ করেন। চড়া দামে বিক্রি করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ জনেরও বেশি মানুষ সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন যে তাঁরা কিডনি বিক্রি করেছেন। তাঁরা বলেন, 'বেশিরভাগ গ্রামবাসীই ক্ষুদ্র কৃষক নয় তো দিনমজুর। করোনার মহামারীর কারণে লকডাউনের পরে প্রচুর অর্থকষ্টে পড়েন। সেই কারণেই দালালরা বলতেই কিডনি বিক্রির জন্য রাজি হয়ে যান।'
কেউ কেউ আবার জানান, ঋণ শোধের জন্য কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন, পরিবারের কারও চিকিত্সার খরচ দিতে কিডনি বিক্রি করেছেন।
এর মধ্যে কয়েকজন জানিয়েছেন, দালালরা তাঁদের কলকাতায় নিয়ে যেত। সেখানেই অস্ত্রোপচার করা হত।
সম্প্রতি গ্রামের কয়েকজন অভিযুক্ত এজেন্ট এবং এই কিডনি পাচার চক্রে জড়িত আরও ৩ জনকে ধরে থানায় নিয়ে যান। পুলিশ এই চক্র নির্মূলে তদন্ত শুরু করেছে। চলছে জেরা।
মরিগাঁওর পুলিশ আধিকারিক অপর্ণা নাটারাজন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে একজন মহিলাও আছেন। এখনও পর্যন্ত কতজন কিডনি বিক্রি করেছেন? এ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানান তিনি।