কোরানে উল্লেখ থাকলেই কোনও প্রথা জরুরি হয় না। এমনই দাবি করলেন ভারতের সলিসিটর জেনারেল তথা কর্ণাটক সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা। তারইমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, জরুরি ধর্মীয় প্রথার বিষয়ে যাওয়া উচিত হয়নি কর্ণাটক হাইকোর্টের।
শুধুমাত্র কোরানে কোনও প্রথার উল্লেখ থাকলেই সেটাই জরুরি হয় না: সলিসিটর জেনারেল
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হিজাব মামলার শুনানির অষ্টম দিনে কর্ণাটক সরকারের আইনজীবী সওয়াল করেন, কোনও ধর্মীয় প্রথা জরুরি এবং সুরক্ষাকবচ প্রদান করা হবে কিনা, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দিষ্ট পন্থা আছে। শুধুমাত্র যে প্রথাগুলি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে সেগুলি জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়। বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ জানায়, হিজাব পরা নিয়ে কোরান উদ্ধৃত করেছেন মামলাকারীরা। পালটা সলিসিটর জেনারেল দাবি করেন, কোরানে কোনও বিষয়ের উল্লেখ থাকলেই সেটা জরুরি ধর্মীয় প্রথা বলে বিবেচনা করা যায় না।
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, 'ওঁরা (মামলাকারীরা) বলেছেন যে কোরানে এটা লেখা আছে এবং কোরানে যা লেখা আছে, সেটা হল দায়িত্ব। (এবং কোরানের দায়িত্বের বিষয়টি) নির্ধারণের দায়িত্ব নয়।' সেইসঙ্গে বিচারপতি ধুলিয়া জানান, জরুরি ধর্মীয় প্রথা পালনের বিষয়ে যাওয়া উচিত হয়নি কর্ণাটক হাইকোর্টের।
সলিসিটর জেনারেল সওয়াল করেন, কেউ যদি জরুরি প্রথা হিসেবে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন, তাহলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু সংবিধানের ভিত্তিতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। পালটা শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, এক্ষেত্রে যে সেই বিষয়টা হয়নি, তা সলিসিটর জেনারেলও স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে সলিসিটির জেনারেল বলেন, 'এটা আমার কাছে একেবারেই ধর্মীয় বিষয় নয়, বরং এটা পড়ুয়াদের ইউনিফর্মের বিষয়।'
কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা
চলতি বছরের ১৫ মার্চ কর্ণাটক সরকারের একটি নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছিল হাইকোর্ট। যে নির্দেশিকার মাধ্যমে কার্যত কলেজের ক্যাম্পাসে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল সরকারি কলেজের কমিটির হাতে। সেইসময় প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ আওয়াস্তির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছিল, হিজাব পরা ইসলামের জরুরি ধর্মীয় প্রথা নয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলায় দায়ের করা হয়। এখন সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানি চলছে। যা আগামিকালও চলবে।
'স্কুলে হিজাব ও গেরুয়া উত্তরীয় পরার অনুমতি দেওয়া হয়নি, ধর্মনিরপেক্ষ রায় হাইকোর্টের'
হিজাব নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা ধর্মনিরপেক্ষ। গেরুয়া উত্তরীয় হোক বা হিজাব - কোনওটাই স্কুলে পরে আসার অনুমতি ছিল না। সুপ্রিম কোর্টে এমনই জানিয়েছেন কর্ণাটক সরকারের আইনজীবী।
আরও পড়ুন: Hijab Case: 'হিজাব পরা ধর্মীয় দায়িত্ব, প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণের' ক্ষমতা নেই, সওয়াল SC-তে
ইন্ডিয়া টুডে'র প্রতিবেদনে অনুযায়ী, সলিসিটর জেনারেল মেহতা দাবি করেন, যে পড়ুয়ারা পিটিশন দাখিল করেছেন, তাঁরা পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিএফআই) ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে কর্ণাটক হাইকোর্টে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার ক্ষেত্রে ‘অদৃশ্য হাত’-র সওয়াল গৃহীত হয়েছে বলে দাবি করেন সলিসিটর জেনারেল।