আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে হিমাচল প্রদেশের সহকারী ড্রাগ কন্ট্রোলার (এডিসি)-কে গ্রেফতার করেছে ইডি। আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়া এবং সরকারি পদের অপব্যবহারের মতো নানা অভিযোগ উঠেছিল। তারপরেই তহবিল তছরুপ প্রতিরোধী আইনের (পিএমএলএ) অধীনে তদন্ত শুরু করে ইডি। গত জুন মাসে তাঁর বাড়ি থেকে রাশি রাশি মদের বোতল, নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্তারা। শুধু তাই নয়, সহকারী ড্রাগ কন্ট্রোলার নিশান্ত সারিনের আরও আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির হদিশ মিলেছে।
ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে উঠে এসেছে যে সারিন ১৩টি ওষুধ কোম্পানি থেকে কোটি কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল নগদ অর্থ, হোটেল বুকিং, দামি উপহার এবং অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা। সারিন তার পদের অপব্যবহারও করেছেন এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে কালো অর্থ সাদা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই হিমাচল এবং হরিয়ানা পুলিশে বেশ কয়েকটি গুরুতর ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইডির মতে, ৪৮ বছর বয়সি নিশান্ত সারিন দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। হিমাচল প্রদেশ এবং হরিয়ানায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করে রাজ্য ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো (হিমাচল পুলিশ)। এই মামলায়, তার বিরুদ্ধে ৪৩.০৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া এবং ড্রাগ ইন্সপেক্টর হিসেবে তার পদের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই মামলায় ২০২১ সালে সোলানের বিশেষ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর হরিয়ানা পুলিশ ২০২২ সালে পঞ্চকুলার সেক্টর ২০ থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে। সারিন, তার সহযোগী ডাঃ কোমল খান্না, বিনয় আগরওয়াল এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। জগবীর সিং অভিযোগ করেন যে সারিন তাকে জেনিয়া ফার্মাসিউটিক্যালসে ডঃ কোমল খান্নার সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য চাপ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তার শেয়ারহোল্ডিং ৫০ শতাংশ থেকে মাত্র ৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন।
আরও পড়ুন-ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা! চাপের মুখে মহিলা সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস মিট আফগান বিদেশমন্ত্রীর
সম্প্রতি ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে, শিমলার রাজ্য ভিজিল্যান্স এবং দুর্নীতি দমন ব্যুরো নিশান্ত সারিনের বিরুদ্ধে ১.৬৬ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করে। তদন্তে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের পর সারিন বেশ কয়েকটি ব্যয়বহুল সম্পত্তির মালিক হন, যার মধ্যে চণ্ডীগড়ের ওম্যাক্স সোসাইটিতে একটি সম্পত্তিও ছিল। এই মামলাগুলির ভিত্তিতে, ইডি ৩১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে একটি মামলা দায়ের করে। ইডির তদন্তে জানা গেছে যে, সারিন তার পদের মাধ্যমে ১৩টি ওষুধ কোম্পানি থেকে হোটেল বুকিং, নগদ অর্থ, দামি উপহার এবং অন্যান্য সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ১.০৬ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ইডির কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বেশ কয়েকজন স্বীকার করেছেন যে, সারিনের হয়রানির ভয়ে তারা এই সুবিধাগুলি প্রদান করেছেন। সারিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডঃ কোমল খান্না তার নির্দেশে জেনিয়া ফার্মাসিউটিক্যালস এবং নিয়া ফার্মার মতো কোম্পানি পরিচালনা করছিলেন। বাস্তবে, নিশান্ত সারিন ছিলেন এই কোম্পানিগুলির প্রকৃত সুবিধাভোগী।
আরও পড়ুন-ভারতে AI বিপ্লব! আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান, রিপোর্ট নীতি আয়োগের
৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের ইডির বিবৃতি অনুযায়ী, সারিন সত্য তথ্য দেননি এবং তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। সারিন বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। তাই আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। ইডির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নিশান্ত সারিন ২০০২ সালের তহবিল তছরুপ প্রতিরোধী আইনের (পিএমএলএ)-এর ধারা ৩-র অধীনে সরাসরি অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ইডি এখন সারিনের আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি সনাক্ত করছে, এবং জড়িত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।