বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহ। আর তার ফলে ঘোরতর প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। সোমবার প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে।
৪০০-৭০০ বছর আগে শেষ বড় সম্প্রসারণের পর থেকে গত কয়েক দশকে গড়ে ১০ গুণ বেশি হারে হিমালয়ের হিমবাহের বরফ গলেছে। 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস' জার্নালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নেচার গ্রুপ অফ জার্নালের একটি পিয়ার-রিভিউ জার্নাল।
ব্রিটেনের লিডস স্কুল অফ জিওগ্রাফির গবেষকরা এই সমীক্ষা করেন। তাতে দেখা গিয়েছে যে হিমালয়ের ১৪,৭৯৮টি হিমবাহ পূর্বোল্লখিত সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০% কমে গিয়েছে। লিডস ইউনিভার্সিটির সহ-লেখক জোনাথন ক্যারিভিক একটি বিবৃতিতে বলেছেন, 'আমাদের অনুসন্ধানগুলি স্পষ্টভাবে দেখায় যে হিমালয়ের হিমবাহ থেকে বরফ হারিয়ে যাচ্ছে। আর তা এমনই হারে যা গত শতাব্দীর গড় হারের চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি। এই দুরাবস্থা শুধুমাত্র গত কয়েক দশকের মধ্যেই আবির্ভূত হয়েছে। মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গেই এক টাইমলাইন মিলে যাচ্ছে।'
পূর্ব হিমালয় উষ্ণায়ন এবং হিমবাহের গলে যাওয়ার দিক দিয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। পূর্ব নেপাল এবং ভুটানের হিমবাহের উল্লেখ করে গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে হিমবাহী হ্রদের সংখ্যা এবং আকার ক্রমাগতই বাড়ছে। বলাই বাহুল্য, এটি হিমবাহের গলে যাওয়ার প্রত্যক্ষ নিদর্শন।
গত ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে হিন্দুকুশ হিমালয়ের তাপমাত্রা ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। খাতায়কলমে এটি সামান্য পরিবর্তন ভাবতেই পারেন। কিন্তু এই সামান্য তাপমাত্রার পরিবর্তনই মাইলের পর মাইল বরফ গলে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ হিমালয়ে একই ভাবে ২.৬-৪.৬ ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এক ভারতীয় সরকারি সমীক্ষায় এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। ফলে এটি দেশে মারাত্মক জলবিদ্যুৎ ও কৃষিগত প্রভাব ফেলবে। সমগ্র জীবজগতে এর প্রভাবের কথা তো বলাই বাহুল্য। হিমালয়ের হিমবাহের বরফ গলা জলে পুষ্ট ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেখানেই উত্স বহু গুরুত্বপূর্ণ নদীর। হিমবাহের বরফ কমে গেলে তার প্রভাব যে শুধু হিমালয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা বোঝা কঠিন নয়।