হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা জারি থাকল বাংলাদেশে। মঙ্গলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বহু জেলাতে নির্দিষ্ট ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। খুন করা হয়েছে এক হিন্দু শিক্ষককে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বাগেরহাটে ঘরে ঢুকে এক প্রাক্তন স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। মৃত শিক্ষকের নাম মৃণালকান্তি চট্টোপাধ্যায়। ঘটনায় তাঁর স্ত্রী শেফালি এবং মেয়ে ঝুমা গুরুতর জখম হয়েছেন। মৃণালবাবু মধুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে রাস্তায় পড়ে গলকাটা মৃতদেহ, উলঙ্গ করে যৌনাঙ্গ 'পরীক্ষা', দেখা হল হিন্দু না মুসলিম)
আরও পড়ুন: আন্ডারকভার FBI এজেন্টকে ভাড়া করে ট্রাম্পকে খুনের ছক, ধৃত পাকিস্তানি: রিপোর্ট
এদিকে পৃথক এক ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে শচিন বিশ্বাস নামে এক ২২ বছর বয়সি যুবকের। এক মসজিদের সামনে এই ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, শচিনকে গুলি করার পাশাপাশি ছুরিকাঘাতও করা হয়। এদিকে প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, যশোরে শতাধিক হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রামদা ও দেশি বন্দুক নিয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে সোনা এবং নগদ টাকা লুট করা হয়। পাশাপাশি প্রাণে বেঁচে থাকতে 'চাঁদা' চাওয়া হয়। নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান বাবলু সাহার বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে। তাঁর দোকানও ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শালবরাট নামক গ্রামে হিন্দুপাড়ায় হামলা চালানো হয়। সেকেন্দারপুর গ্রামেও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হয়। এছাড়া মনিরামপুর উপজেলা, অভয়নগর উপজেলাতেও একই ঘটনা ঘটে। এদিকে বরিশালের মঠবাড়িয়া উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরে হামলা হয়।
এদিকে নোয়াখালিতেও হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে সোনাদিয়া ইউনিয়নের উপজেলা হিন্দু পরিষদের সভাপতি সহদেব সাহার বাড়িতে হামলা হয়। সেই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগের আঙুল ওঠে স্থানীয় বিএনপির কর্মীদের ওপরে। ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় শতাধিক বিক্ষোভারীদের দল হামলা চালায় মীনা রানি দাস নামক এক মহিলার বাড়িতে। তাঁদের বাড়িতে দুর্গামন্দিরেও ভাঙচুর চালানো হয়। এদিকে কুয়াকাটায় আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলা হয়। তাঁর বাড়ির পাশে এক মন্দিরেও ভাঙচুর চালানো হয়। এদিকে কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। নাটোরেও হিন্দুদের বাড়ি এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুট করা হয় সোনা, টাকা, ল্যাপটপ।
এদিকে দিনাজপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলার ঈশানিয়া ইউনিয়নে ৪০টি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এদিকে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ফুলতলা শ্মশানঘাট এলাকায় দুর্গামন্দির ভাঙচুর করা হয়। এদিকে হিন্দুদের ওপরে হামলা চলে চাঁদপুরেও। সেখানে পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের হামলা চালানো হয়। এছাড়াও আরও একাধিক সংখ্যলঘু বাড়িতে হামলা হয়। এদিকে শরীয়তপুর শহরে একটি মন্দির ভেঙে দেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে প্রথম আলোর রিপোর্টে। অপরদিকে খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে ১১টি হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বাণীশান্তা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য জয়ন্ত কুমার গাইন, আওয়ামি লিগ নেতা সঞ্জীব মণ্ডলের বাড়িতে হামলা করা হয় বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া কৈলাসগঞ্জ, কামারখোলা, মহেশ্বরীপূর ইউনিয়নেও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়। এদিকে রংপুরে হিন্দুদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফরিদপুরে বহু হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট চালানো হয়।