গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের এক আধিকারিকের ছেলের নাম জড়িয়েছিল কাশ্মীরের এক জালিয়াতি কাণ্ডে। এই আবহে সেই আমলা পদত্যাগ করলেন নিজের পদ থেকে। জানা গিয়েছে হিতেশ পাণ্ডিয়া নামক সেই আমলার ছেলে অমিত পাণ্ডিয়া সম্প্রতি কাশ্মীরে পিএমও আধিকারিক সেজে গিয়েছিলেন কিরণ ভাই প্যাটল নামক অপর জালিয়াতের সঙ্গে। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কিরণ ভাই প্যাটেল। এদিকে প্রথমে এই ঘটনায় অমিত পাণ্ডিয়ার যোগ থাকা কথা অস্বীকার করেছিলেন সিএমও আধিকারিক হিতেশ। পরে ছেলের কাণ্ডে কান লাল করে দফতর ছাড়লেন হিতেশ। জানা গিয়েছে, ২০০১ সাল থেকে গুজরাট মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে পিআরও পদে ছিলেন হিতেশ। এদিকে হিতেশ নিজের পদত্যাগ পত্রে দাবি করেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের তালিকায় অমিতের নাম যোগ করেনি। (আরও পড়ুন: রাজ্যে ডিএ আন্দোলনকারীদের দমাতে এ কী করছে সরকার! হতবাক সব মহল)
এদিকে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কিরণ ভাই প্যাটেল নিজেকে পিএমও-র আধিকারিক পরিচয় দেয়। তার দাবি, পিএমও-র 'স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ক্যাম্পেন' বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদে রয়েছে সে। চলতি বছরের শুরুর দিকে কাশ্মীরে গিয়ে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে 'বৈঠক' পর্যন্ত করেন কিরণ ভাই প্যাটেল। পরে অবশ্য সত্যিটা সামনে চলে আসে। গ্রেফতারির প্রায় ১০ দিন পর আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেট কিরণ ভাই প্যাটেলকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠালে গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এদিকে গ্রেফতারির দিনই কিরণ ভাই প্যাটেলের নামে এফআইআর করা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: আর পাবেন না মোটা টাকার ভাতা, সাংসদপদের পাশাপাশি বাসভবনও হারাবেন রাহুল গান্ধী?
কাশ্মীর সফরের সময় কিরণ ভাই প্যাটেলের সঙ্গে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী থাকতেন। এদিকে বুলেটপ্রুফ মহিন্দ্রা স্কর্পিও এসইউভি গাড়িও দেওয়া হয়েছিল তাকে। সরকারি টাকায় পাঁচ তারা হোটেলেও রাত্রি যাপন করেন তিনি। এদিকে দেখা গিয়েছে, কিরণ ভাই প্যাটেলের টুইটার অ্যাকাউন্ট 'বেরিফাইড'। সেখানে হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছেন। এমনকি গুজরাট বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপসিং ভাগেলাও তাকে ফলো করেন। তার টুইটার বায়োতে কিরণ দাবি করেছে, সে ভার্জিনিয়ার কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি, আইআইএম ত্রিচি থেকে এমবিএ এবং কম্পিউটার সায়েন্সে এমটেক এবং বিই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। প্যাটেল নিজেকে 'চিন্তাবিদ, কৌশলবিদ, বিশ্লেষক এবং প্রচারাভিযান পরিচালক' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, কিরণ প্রথমবার ফেব্রুয়ারিতে উপত্যকায় যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার একাধিক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। তাতে দেখা গিয়েছে যে সে মিলিটারি ভ্যানের কনভয়ের সঙ্গে ভ্রমণ করছে। প্যারামিলিটারি গার্ডরা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। শ্রীনগরের লালচকের ক্লক টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিতেও দেখা গিয়েছে তাকে। জানা গিয়েছে, তার দ্বিতীয় কাশ্মীর সফরে প্রশাসন সতর্ক হয়ে যায়। গোয়েন্দাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর কিরণের 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেক' হয়। পরে মার্চ মাসে তাঁর তৃতীয় সফরের সময় শ্রীনগরে এক হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় কিরণকে। এদিকে জালিয়াতি বুঝতে না পারায় দুই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। অপরদিকে গুজরাট পুলিশও এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।