সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কাজ করতে হত। বেতন মিলত ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা। আবার ‘টার্গেট’-কে টুপি পরাতে পারলে মিলত কমিশন। জালিয়াতির অভিযোগে নয়ডার কলসেন্টার থেকে ৭৬ জনকে গ্রেফতারির পরে এমনই তথ্য সামনে এল। পুলিশ জানিয়েছে, কম্পিউটারে সমস্যা বলে ভারতে বসে আমেরিকানদের থেকে কোটি-কোটি টাকা লুটে নেওয়া হত। ধৃতদের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৮টি ল্যাপটপ, ৪৫টি টেলিফোন, ২৪টি মোবাইল ফোন-সহ অন্যান্য সরঞ্জাম। নয়ডা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে সেক্টর ৬৩ থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৯ ধারা, ৩১৮ ধারা এবং ৩৩৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
মাসদেড়েক ধরে কলসেন্টার খুলে জালিয়াতি চলছিল
নয়ডার (মধ্য) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শক্তিমোহন আওয়াস্তি জানিয়েছেন, যে ৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চার মাস্টারমাইন্ডও আছে - ক্রুণাল রায় (৩৭), সৌরভ রাজপুত (৩০), সাজিদ আলি (৩২) এবং সাদিক ঠাকুর (৪০)। তারা সকলেই আদতে গুজরাটের বাসিন্দা। থাকত নয়ডায়। আর সেখানেই মাসদেড়েক ধরে কলসেন্টার খুলে জালিয়াতি চলছিল। সেজন্য নয়জন মহিলা-সহ ৭২ জনকে চাকরিও দেওয়া হয়েছিল। তাদের মাইনে দেওয়া হত। আমেরিকার সময় মেনে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাত আটটা থেকে শুরু হত ‘কাজ’। ওই পাঁচদিন কাজ করা হত। চলত ভোরবেলা পর্যন্ত।
কীভাবে প্রতারণা চক্র কাজ করত?
কীভাবে সেই জালিয়াতির কাজ করা হত, সেটা ব্যাখ্যা করে নয়ডার (মধ্য) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, জালিয়াতরা টাকা দিয়ে 'ইমেল ব্লাস্টিং' করিয়ে নিত। অর্থাৎ ১০,০০০ মানুষকে ইমেল পাঠানোর জন্য একজন ব্যক্তিকে টাকা দিত। তারপর প্রতারিতদের কাছে বার্তা যেত যে তাঁদের কম্পিউটারে কোনও সমস্যা আছে। তাতে যে লিঙ্ক থাকত, সেখানে ক্লিক করতে স্ক্রিনের রং নীল হয়ে যেত। আর তাতে বলা হত যে এই নম্বরে ফোন করলে সহায়তা পাওয়া যাবে। সেই নম্বরে ফোন করলে নয়ডার কলসেন্টারে ফোন আসত।
কোটি-কোটি টাকা প্রতারণা করা হয়েছে, বলল পুলিশ
পুলিশ জানিয়েছে, যারা কলসেন্টারে কাজ করত, তারা নিজেদের একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী হিসেবে পরিচয় দিত। তারপর প্রতারণার ‘কাজ’ শুরু করা হত। এভাবে হাজার-হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। গায়েব করা হয়েছে কোটি-কোটি টাকা। নয়ডার (মধ্য) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ওই কলসেন্টারে তাদের নেওয়া হত, যারা আমেরিকার টানে ইংরেজি বলত। ফলে যাঁরা প্রতারকদের ‘টার্গেট’ হতেন, তাঁরা সহজেই বিশ্বাস করে নিতেন। আর সেটার ফায়দা লুটত প্রতারকরা।