জেলে ধনকুবের। জামিন করাতে মরিয়া তাঁর স্ত্রী। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি দেশের অন্যতম বড় প্রতারক। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে জেলে বসেই ২০০ কোটি টাকা কামিয়েছিল সুকেশ চন্দ্রশেখর। হাতিয়ার একটি ফোন, টেলিগ্রাম ও ভয়েস পাল্টে দেওয়ার অ্যাপ।
জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ থেকে নোরা ফতেহি। সুন্দরী বলি নায়িকাদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা ছিল প্রতারক সুকেশের। নায়িকাদের পাত্তা পেতে নিয়মিত কোটি কোটি টাকা ওড়াতেন তাঁদের পেছনে। কখনও ৫০ লাখ টাকা ঘোড়া উপহার, কখনও কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি, আবার কখনও চ্যাটার্ড বিমান বুক করে দেওয়া। 'বন্ধু' হিসাবে কিছুই বাকি রাখেনি এই 'কনম্যান।' অন্যদিকে সমুদ্র সৈকতে সুসজ্জিত প্রাসাদ, ১৬টি বিলাসবহুল গাড়ি, লাখ টাকার জুতো দেখেও চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। কিন্তু এত টাকা আসত কোথা থেকে?
জুন ২০২০ থেকে মে ২০২১। সেই সময়ে প্রতারণার মামলায় তিহার জেলে বন্দি সুকেশ। আবার অন্যদিকে জেলে বন্দি Ranbaxy ওষুধ সংস্থার প্রাক্তন প্রধান শিবেন্দ্র সিং। তাঁকে জেল থেকে বের করার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন তাঁর স্ত্রী। এমন সুযোগ ছাড়েনি সুকেশ।
কয়েকটি সামান্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ভয়েস মডুলেশন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে জেল থেকেই শিবেন্দ্র সিংয়ের স্ত্রী অদিতি সিংকে বেশ কয়েকটি কল করেছিলেন সুকেশ। কখনও একজন উচ্চপদস্থ আইএএস অফিসার হিসাবে, আবার কখনও আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রতিনিধি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসাবে ফোন করেন তিনি। প্রতিটা ক্ষেত্রেই অ্যাপে ভয়েস বদলে নিয়ে কল করতেন। স্বামীকে জেল থেকে বের হতে সাহায্য করার অজুহাতে অদিতির কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোট ২১৫ কোটি টাকা আদায় করেছিলেন তিনি৷
টাকা বিজেপি পার্টি ফান্ডে দিন, ব্যবস্থা করা হবে, ইনিয়ে-বিনিয়ে সেই কথাই বলেছিলেন সুকেশ। অ্যাপের মাধ্যমে এমনভাবে ফোন করতেন যে নম্বরও আইন মন্ত্রকের।
অন্যদিকে অদিতিকে বলেছিলেন, তাঁর ফোন সরকার ট্যাপ করছে। তাই তাঁর স্বামী বা অন্য কাউকে এই লেনদেনের বিষয়ে জানলে খুব গণ্ডগোল হয়ে যাবে। ফলে অদিতি কাউকে জানানি।
ধীরে ধীরে গহনা, বন্ড, বিনিয়োগ, সঞ্চয়, সম্পত্তি বিক্রি করে করে সুকেশের বলে দেওয়া অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে থাকেন অদিতি। এমনকি ধারও করেন বন্ধু-আত্মীয়দের থেকে।
যতদিনে গোয়েন্দাদের নজরে পুরো বিষয়টি এল, ততদিনে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা ঝেড়ে দিয়েছেন সুকেশ। পুরোটাই তিহার জেলের একটি ঘরে বসে। হাতিয়ার খালি একটি স্মার্টফোন। সেই সঙ্গে বিশ্বস্ত কিছু সহচর।
ইডি-র নজরে বিষয়টি আসার পরে, পুরো র্যাকেটটি ফাঁস করে। অদিতিকে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়।