বাংলার গলি থেকে রাজপথ যখন ক্ষোভে ফেটে পড়ে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ ধ্বনিতে উত্তাল, তখন এই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ক্রোশ দূরে উত্তর প্রদেশের হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারের ক্ষোভও উঠে এল রিপোর্টে। ৪ বছর কেটে গিয়েছে, আজও হাথরাসের গণধর্ষণ ও খুনের শিকার হওয়া নির্যাতিতার পরিবার ‘জাস্টিস’এর অপেক্ষায়। মেয়ের চিতাভস্ম বুকে আঁকড়ে রেখেছেন তাঁরা, বিচারের অপেক্ষা করা এই পরিবার তা ভাসিয়ে দেয়নি আজও। যে নির্যাতিতাকে রাতের অন্ধকারে করা হয়েছিল দাহ। সেই সমস্ত পর্ব আজও তাঁদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আজও চলছে তাঁদের আইনি লড়াই। এই মাঝের সময়টা তাঁরা কোন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন? উঠে এল রিপোর্টে।
অভিশপ্ত সেই দিনের কথা মনে করে, নির্যাতিতার ছোট ভাই বলছেন, যখন দেহ উদ্ধার হয়েছে, তখন তাঁর বোনের শিড়দাঁড়া ভাঙা ছিল, ক্ষতবিক্ষত ছিল জিব। তাঁর প্রশ্ন,'কেউ যদি তা না করে থাকে… তাহলে এটা কীভাবে হল?' ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র রিপোর্টে এই হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের নানান অভিযোগ উঠে এসেছে। প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশের হাথরাসের দলিত তরুণীর ওপর গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হলেও, এক ২০ বছরের যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কোর্ট, ৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। নির্যাততার ভাইদের অভিযোগ, কেসের মোড় ঘুরিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা সময় মনে হয়েছিল যেন এটা ‘অনার কিলিং’ এর মতো করে আমাদের বিরুদ্ধেই তাঁরা অভিযোগ তুলছেন। নির্যাতিতার দাদা বলছেন,'যখন ওই তিনজনকে (অভিযুক্ত) মুক্তি দেওয়া হয়, তারা বাড়ি আসে। তাদের মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। পরিবার তার প্রতিবেশীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। এখন তারা মনে করছে তারা অজেয়।'
নির্মম যৌন অত্যাচারের শিকার ওই নির্যাতিতার ভাইরা বলছেন,'আমাদের বোনের বয়ান, যা তিনি মৃত্যু শয্য়া দিয়েছেন, তাকে বৈধ বলে মান্যতা দেওয়া হয়নি, তাঁকে তাড়াহুড়ো করে কর্তৃপক্ষ মাঝরাতে দাহ করে।' পরিবার বলছে, তাঁরা যেন ‘জেলের মতো অবস্থায়’ রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, তা নিয়ে রয়েছে বহু বিধি বিধান। ২৪x৭ তাঁরা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন। ‘যেখানেই যাই সিআরপিএফ অফিসাররা আমাদের সঙ্গে যান, যেন গৃহবন্দি হয়ে আছি।’তাঁদের আরও অভিযোগ, যে বাড়ি দেওয়ার কথা ও পরিবারের একজন সদস্য়কে চাকরি দেওয়ার কথা সরকার জানিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি।
হাথরাসের ভুল গারহি গ্রামে নির্যাতিতার ওই বাড়িতে বর্তমানে রয়েছেন তাঁর ঠাকুমা, বাবামা, ভাইরা, বড় ভাইয়ের স্ত্রী, বাচ্চারা। এই পরিবারের জন্য অর্থ রোজগারও তাঁদের কাছে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালে তাঁরা পেয়েছিলেন ২৫ লাখ ক্ষতিপূরণ। তবে দাঁতে দাঁত চিপে এই কষ্টের মধ্যেও তাঁরা বলছেন, ‘বিচারের জন্য লড়ব, বোনের চিতাভস্মকে ততদিন রেখে দেব, যতদিন না বিচার আসে। ’