রবিবার সকালেই পালাবদলের চিত্রটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল গত ১৩ বছর ধরে গৃহয়ুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায়। মাত্র দু'সপ্তাহের এক অভিযানে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছে গিয়েছিল বিদ্রোহীরা।
বেগতিক বুঝে রবিবারই দেশ ছেড়ে সপরিবার চম্পট দেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রুশ সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বাশার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নাকি সেদেশেই আশ্রয় নিয়েছেন।
ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের নেতা আবু মহম্মদ আল-জোলানি পৌঁছে যান দামাস্কাসে। প্রসঙ্গত, তাঁর নেতৃত্বাধীন হায়াত তেহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরাই অন্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিয়ে সিরিয়া দখল অভিযানে নেমেছিল।
রবিবারের এই ঘটনাপ্রবাহের পর দামাস্কাসের উমায়াদ মসজিদে ভাষণ দেন আল-জোলানি। যদিও সেই সময় তিনি তাঁর আসল নাম (আহমেদ আল-শারা) উল্লেখ করেন বলে দাবি সূত্রের। যা কিছুটা ব্যতিক্রমী। এমনকী, ব্যতিক্রমী সুর ধরা পড়েছে তাঁর বিজয় ভাষণেও।
সেই সময় সেখানে উপস্থিত বিদ্রোহীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমার ভাইয়েরা, এই অঞ্চলের জন্য এই জয় ঐতিহাসিক।' তাঁর এই ভাষণের একটি ভিডিয়ো মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা হয়। জারি করা হয় এই সংক্রান্ত একটি বিবৃতি।
এর পাশাপাশি, এক্স হ্যান্ডেল-সহ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ওই বিদ্রোহী নেতার বিজয় ভাষণ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ঘোষণা করেন, এই জয় এই সমগ্র ইসলামি রাষ্ট্রটির জয়। তিনি বলেন, 'আজ, সিরিয়া পবিত্র হল'। তাঁর মতে, ‘যেসব মানুষকে এতদিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল, তারাই এই জয়ের জন্ম দিয়েছে। এবং মুজাহিদীনরা (যোদ্ধা) তাদের শিকল ছিন্ন করে দিয়েছে।’
নিজের ভাষণে আল-শারা ওরফে আল-জোলানি সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।
তাঁর অভিযোগ বাশারের শাসনে সিরিয়া আদতে 'ইরানি উচ্চাকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র'-এ পরিণত হয়েছিল। যেখানে তুঙ্গে ছিল সাম্প্রদায়িকতা। তিনি ইরান এবং হেজবোল্লাকে আসাদের সঙ্গী বলেও তোপ দাগেন।
এই ঘটনার যেসমস্ত ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, বিদ্রোহী নেতা দামাস্কাসের ওই মসজিদে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে চিৎকার করতে শুরু করে সকলে। তাদের সকলকে বলতে শোনা যায়, 'আল্লাহু আকবর' (ঈশ্বর শ্রেষ্ঠ)।
প্রসঙ্গত, এইচটিএস নামক এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি আদতে আল-কায়দার সিরিয়ান শাখা বলে দাবি করা হয়। ২০১৬ সালেই আল-কায়দার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তারা।
ইতিমধ্যেই নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে তৎপর হয়েছে এই গোষ্ঠী। তারা যত দূর সম্ভব কট্টরপন্থা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে বলেও নানা মহলের দাবি। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত খাতায়-কলমে এই সংগঠন 'জঙ্গিগোষ্ঠী' হিসাবেই পরিচিত। অন্তত পশ্চিমী দেশগুলিতে এটাই তাদের পরিচয়।