বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি, ২০২৫) চট্টগ্রামের আদালতে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনের মামলায় শুনানি হলেও আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।
এই প্রেক্ষাপটে এবার উচ্চ আদালতে এই মামলা যেতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে অনুমান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি যখন এতটাই জটিল, সেই মুহূর্তে শোনা যাচ্ছে, যদি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন সংক্রান্ত মামলাটি হাইকোর্টে ওঠে, তাহলে সেখানে তাঁর হয়ে সওয়াল করতে পারেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না।
বিষয়টি নিয়ে এপার বাংলার সংবাদমাধ্যম 'দ্য ওয়াল'-এর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন পান্না। সেই কথোপকথন থেকে জানা গেল, আগামী দিনে চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে তাঁর মামলা লড়ার একটা সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু, এখনই এ নিয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দিতে রাজি হননি প্রবীণ আইনজীবী।
তবে, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে যে ১০ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ফোনালাপ পোস্ট করা হয়েছে, তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ নিয়ে আইনজীবী পান্নার মতামত:
পান্না সাহেব জানিয়েছেন, চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। সাধারণত, এমন গুরুতর অভিযোগের জামিন নিম্ন আদালতে হয় না। সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই হওয়া দরকার।
আইনজীবী পান্না জানান, তিনি এখনও পর্যন্ত এই মামলার বিস্তারিত তথ্য জানেন না। বরং, যেটুকু জেনেছেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকেই জানতে পেরেছেন। ফলত, ঠিক কী কারণে চিন্ময় কৃষ্ণকে দেশদ্রোহিতার মামলায় অভিযুক্ত করা হল, সেটা এখনও তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়।
সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অভিযোগ উঠেছে সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে পান্না সাহেবের বক্তব্য হল, এখানে দেখা দরকার প্রথমত - সত্যিই জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে কিনা। এবং দ্বিতীয়ত - যদি অবমাননা করা হয়েই থাকে, তাহলে তা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে? নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ঘটেছে?
পান্না সাহেবের বক্তব্য হল, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এই ঘটনায় ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়নি।
দেশের আইনি পরিস্থিতি নিয়ে আইনজীবী পান্নার মতামত:
সম্প্রতি যাঁরাই চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে মামলা লড়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের নানাভাবে বিপাকে পড়তে হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি কোনও প্রতিবাদ বা কটাক্ষ করেননি বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। যদিও একইসঙ্গে এটাও মনে করে দিয়েছেন, তাঁরাও দেশের আইনব্যবস্থার অংশ।
তাই, আইনজীবীদের যদি কাজ করতে গিয়ে কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, তাহলে সেই দেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থার কী পরিস্থিতি, সেটা সহজেই অনুমেয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কতটা সমস্যায় আছি, বুঝে নিন।... আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়ছি। আইনের শাসন না থাকলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বার অ্যাসোসিয়েশনের পদক্ষেপ নিয়ে আইনজীবী পান্নার মতামত:
বাংলাদেশি বিভিন্ন সাংবাদমাধ্যম সূত্রেই জানা গিয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে যাতে স্থানীয় আদালতের কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম বার অ্যাসোসিয়েশন।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইনজীবী পান্না সরাসরি জানান, কোনও বার অ্যাসোসিয়েশনই এমনটা করতে পারে না। আইন অনুসারে, প্রত্যেককেই আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিতে হবে। এমনকী, অভিযুক্ত যদি খুনের আসামি হন, দেশদ্রোহিতার আসামি হন, তাহলেও তাঁর থেকে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।