চলিত মাসে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে আয়োজিত এক ধর্মীয় মিছিল থেকে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা একটি ব্যানার ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। গত ৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। রাওয়াতপুর থানার দায়ের করা এই মামলায় ১৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীর নাম রয়েছে। এরপরেই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। এই আবহে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মিম প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
শুক্রবার বিহারের পূর্ণিয়ায় দাঁড়িয়ে সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন তোলেন, 'যদি 'আই লাভ মহাদেব' গোষ্ঠী থাকে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এখানে দেশবিরোধী কী হচ্ছে? এটা কী ধরণের সহিংসতাকে উস্কানি দিচ্ছে? 'ভালোবাসা' শব্দটির মধ্যে কোথায় সমস্যা রয়েছে? আমার মনে হয় আমাদের এই লোকদের জন্য মুঘল-ই-আজমের 'মহব্বত জিন্দাবাদ' গানটি বাজানো উচিত। যদি 'শুভ জন্মদিন প্রধানমন্ত্রী মোদী' পোস্টার থাকতে পারে, তাহলে 'আই লাভ নবী মুহাম্মদ' পোস্টার কেন থাকতে পারে না?' সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন,'ধৰ্মীয় স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার। এতে দেশবিরোধীর কী আছে? এর কোন অংশ সহিংসতাকে উস্কানি দিচ্ছে?... একজন মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূরক হয় না যতক্ষণ না সে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নবী মুহাম্মদকে বেশি ভালোবাসে। এর বিরোধিতা করে আপনি বিশ্বকে কী বার্তা দিচ্ছেন?'
উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তোপ দেগে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, 'উত্তরপ্রদেশের এডিজিপি বলছেন যে নতুন পোস্টার লাগানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু 'শুভ জন্মদিন প্রধানমন্ত্রী' বা 'শুভ জন্মদিন মুখ্যমন্ত্রী' পোস্টার লাগানোর অনুমতি দেওয়া হবে। তাহলে এমন একটি আইন করুন যাতে এই দেশে কেউ ভালোবাসার কথা বলতে না পারে।' এর আগে এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এই তিনটি শব্দে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুধু তারাই দেখাতে পারে, যারা মানসিকভাবে অসুস্থ। আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি লেখাতে কেউ কেন আপত্তি করবে, সে জন্য কাউকে কেন গ্রেফতার করা হবে, এটা আমি বুঝতে পারছি না।’ ওমর আবদুল্লাহ বলেন, 'হিন্দু ভাই–বোনেরা আরাধ্য দেব–দেবীর ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। তাঁদের নামে জয়ধ্বনি দিতে পারেন। শিখ ভাই–বোনেরাও তাঁদের ধর্মীয় গুরুদের ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। অন্যায়ের কিছুই তো নেই।
বিতর্কের সূত্রপাত
কানপুরে গত ৪ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের এক ধর্মীয় মিছিলে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছিল। তার প্রতিবাদ করা হয় হিন্দুদের তরফে। তাই নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ঘিরে এই বিবাদে মধ্যস্থতা করতে আসে পুলিশ। উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কানপুর পুলিশের ডিসিপি দীনেশ ত্রিপাঠী জানান, সরকারি নিয়ম অনুসারে ধর্মীয় মিছিল পুরোনো নিয়ম মেনেই করতে হয়। সেখানে নতুন ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। তবে সেদিন সেই মিছিলের সময় কয়েকজন যেখানে ব্যানার থাকে সেই স্থান থেকে সরিয়ে নতুন জায়গায় স্থাপন করে। তাই নিয়েই বিরোধ। পরে যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে পুরোনো জায়গাতেই ব্যানার লাগানো হয়। এরপরেই কানপুরের মুসলিম পক্ষের অভিযোগ, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। হিন্দুদের তরফেও একই দাবি করা হয়। দুই পক্ষের অভিযোগ শোনার পর পুলিশের তরফে মীমাংসা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এদিকে কানপুরের ঘটনা নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে কানপুর পুলিশকে ট্যাগ করে লেখেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ বলা অপরাধ নয়। যদি বলা অপরাধ, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে তিনি শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত।' তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ প্ররোচিত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যা অনুচিত।