নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে মহাকুম্ভগামী রেলযাত্রীদের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিরোধীরা ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। এই আবহে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বায়ুসেনা সার্জেন্ট সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুললেন এই নিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী অফিসার আজিতের দাবি, প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। তবে রেলযাত্রীদের কেউ কোনও কথাই শুনছিলেন না। (আরও পড়ুন: নয়াদিল্লি স্টেশনে মৃতের সংখ্যা বাড়ল, ঘটনার পর কী করল রেল?)
বার্তাসংস্থা এএনআই-কে প্রত্যক্ষদর্শী বায়ুসেনা অফিসার বলেন, 'নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে আমাদের ট্রাইসার্ভিসের অফিস আছে। সেখানে ডিউটিতে যোগ দিতে আসছিলাম আমি। এখানে ভিআইপি মুভমেন্ট হলে সেগুলির দায়িত্বে থাকি আমরা। সেই কারণেই রেলস্টেশনে এসেছিলাম। আমি নিজের কাজ শেষ করে যখন অফিসে ফেরত যাচ্ছিলাম, আমি তখন ভিড়ের কারণে যেতে পারিনি। এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে, তার আমার মনে সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বিকেল ৫টার সময়ই। কারণ আমি যখন ডিউটিতে যোগ দিতে আসছিলাম, তখন নয়াদিল্লি মেট্রো স্টেশন থেকে বের হতে আমার এক ঘণ্টা সময় লাগে। যেটা কি না ২ মিনিটের কাজ। এত বেশি ভিড় ওখানে ছিল। আর সেই পাবলিকের প্রায় সবাই ট্রেন ধরতে রেল স্টেশনে আসছিলেন বলেই আমার মনে হয়েছিল।'
এরপর অজিত আরও বলেন, 'এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার সময় প্রয়াগরাজে ছিলাম। সেদিনই সেখানে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আমি সেখানে দেখেছিলাম যে কেমন ধরনের ভিড় হতে পারে এবং পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে। এই আবহে স্টেশনের ভিড় দেখে আমি নিজে প্ল্যাটফর্মে নেমে এসে যাত্রীদের উদ্দেশে ঘোষণা করেছিলাম যাতে যাত্রীরা প্রয়োজনে ২-৩ দিন অপেক্ষা করে যান। এক ট্রেনে একই সময়ে ৫-১০ হাজার মানুষ যাত্রী করতে পারেন না। কিন্তু কেউ কোনও কথা শুনতে রাজি ছিলেন না। এই ট্রেনে জায়গা না পেয়ে লোকে অন্য একটা ট্রেন ধরতে যান, ওতে জায়গা না পেয়ে অন্য ট্রেনের উদ্দেশে দৌড়ান। এর জেরেই এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়।'
এরপর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বায়ুসেনা অফিসার বলেন, 'যেখানে একই জায়গায় ৫-১০ হাজার লোক একত্রিত হয়ে পড়েন... সেখানে প্রশাসনের কতজনই বা থাকেন এখানে? ১০, ৫... ৫০ই মেনে নিন। তো ১০ হাজার মানুষকে সামলাতে এই ৫০ জনকে অনেকটা ছড়িয়ে পড়তে হয় এবং অনেক কষ্ট করতে হয়। আর আমি নিজের চোখে দেখেছি যে প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ কোনও কথা শুনতেই রাজি ছিল না। আমি নিজে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছি... মেলা এখনও ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আছে। তাই এভাবে একই ট্রেনে সবাই মিলে যেতে চাইলে সেটা উচিত না। আমি ৮টার সময় এই কথা বলেছিলাম। এর কিছু পরেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেল।'
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে রেল স্টেশনে ট্রেন নিয়ে ঘোষণার জেরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অজিত বলেন, 'আমি ঘোষণার দিকে ততটা খেয়াল করিনি। আমি তখন নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমি পরে নিজে অফিসে যেতে না পেতে ভিড়ে আটকে যাই। তাই আমি লোকজনদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। পরে আমি নিজে বেশ কয়েকজন আহতকে বাইরে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম।'