বিমানে চড়ে যাঁরা আন্তর্জাতিক সফর করেন, সেইসব যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা সামনে এল। নয়া নির্দেশিকা অনুসারে, আন্তর্জাতিক বিমানে যাতায়াতের জেরে যদি কারও মৃত্যু হয়, কিংবা যদি কোনও যাত্রী কোনওভাবে আহত হন, তাঁদের উড়ান যদি শুরু হতে দেরি হয়, অথবা বিমানে সফরকালীন যাত্রীকে যদি তাঁর মালপত্র সংক্রান্ত কোনও সমস্যায় পড়তে হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থাকে আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।
এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই তাদের নয়া নির্দেশিকা ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অসামরিক উড়ান সংগঠন (আইসিএও)। তাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঊর্ধ্বসীমা আগের তুলনায় অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনার নিরিখে আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে এই নয়া নিয়ম কার্যকর করা হবে। শনিবার আইসিএও-র পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করা হয়।
সেই অনুসারে, এবার থেকে বিমানে সওয়ার যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঊর্ধ্বসীমা ১,২৮,৮২১ এসডিআর বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১,৫১,৮৮০ এসডিআর। প্রসঙ্গত, স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা এসডিআর হল একটি একক।
আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল (আইএমএফ) এই এককের পরিমাপ নির্ধারণ করে। যা আদতে একটি সদা পরিবর্তনশীল পরিমাণ। যা সংশ্লিষ্ট দিনে ১ মার্কিন ডলারের আর্থিক মূল্যের সমপরিমাণ সোনার সমতুল্য।
সেই আর্থিক মূল্যের বর্তমান হারের বিচারে, ভারতগামী বা ভারত থেকে উড়ান শুরু করা কোনও আন্তর্জাতিক বিমানে কোনও যাত্রীর মৃত্যু হলে, বা উপরোক্ত কোনও এক বা একাধিক কারণে যাত্রীর ক্ষতি হলে, আর্থিক ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ (ভারতীয় মুদ্রায়) ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
যে ১৪০টি দেশ আইসিএও-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেই সবক'টি দেশের ক্ষেত্রেই নয়া নিয়ম কার্যকর হবে। যার মধ্যে ভারতও রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই দেশগুলিকে এই বিষয়ে আইনি নিয়মাবলী জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইসিএও।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য প্রতি পাঁচবছর অন্তর একটি পর্যালোচনা করে আইসিএও। সেই অনুসারেই আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত করা হয়।
তবে, একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র ক্ষতিপূরণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে কোনও যাত্রীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার সেই সর্বাধিক পরিমাণ অর্থই ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাবে।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক এই নিয়মের অধীনেই ২০২০ সালে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস IX-১৩৪৪ দুবাই-কালিকট দুর্ঘটনায় নিহত ২১ জন যাত্রীর পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল। ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন আহত ১৬৭ জন যাত্রীও।
সেই সময়ে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ ১২ বছরের অধিক বয়সী নিহত যাত্রীদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী নিহত যাত্রীদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল।
সেইসঙ্গে, গুরুতর আহতদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা এবং সামান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।