স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করলে প্রথম পক্ষের সন্তানের হেফাজত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এক্ষেত্রে প্রথম পক্ষের সন্তানের হেফাজত দাবি করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা হবে না। এই বলে সুপ্রিম কোর্ট এক ব্যক্তিকে তার প্রথম স্ত্রীর নাবালক ছেলেকে হেফাজত নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন : স্ত্রীকে লুকিয়ে রেখেছে মেয়ে, ‘আমার কাছে ফিরিয়ে দিন’, হাইকোর্টে চিকিৎসক
জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাদের নাবালক সন্তানকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি বিআর গাভাই এবং কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ বলেছে যে, নাবালক ছেলেটির কল্যাণের যত্ন তাঁর পিতা নিতে পারেন। তিনিই হলেন, স্বাভাবিক অভিভাবক। এই বলে সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তারপরে নাবালককে তার দাদু নিজের কাছে নিয়ে যান। সেখানেই পড়াশোনা করছে নাবালক। হাইকোর্ট বলেছিল, নাবালক শিশুর কল্যাণই হল সর্বাধিক বিবেচনার বিষয়। তাকে তার দাদুর সঙ্গে থাকতে দেওয়ার মাধ্যমে কল্যাণ সম্ভব। এরপর হাইকোর্ট বাবাকে প্রতি মাসের প্রথম দিনে নিয়মিতভাবে সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিল।
এরপর নাবালকের বাবা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে বিরোধিতা করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নাবালককে হেফাজতে না দেওয়ার কারণ হিসেবে দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানিয়ে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়ে নির্দেশ বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘বাবা একজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং রাজ্য সরকারি কর্মী। একটি দায়িত্বশীল পদে আছেন তিনি। যদিও বাবা পুনরায় বিয়ে করেছেন, তবুও এটি তার অভিভাবকত্বের দাবির বিরুদ্ধে কোনও যুক্তি খাড়া করতে পারে না। বিশেষ করে যদি তিনি সন্তানের যত্ন কীভাবে নেবেন সেই প্রশ্ন যদি উঠত।’
আদালত আরও বলেছে, এটাও ঠিক যে ব্যক্তির শ্বশুর নাবালকের নামে ১০ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন এবং তিনি ২৫ লক্ষ টাকার একটি জীবন বীমা পলিসিও নিয়েছেন। যার সুবিধাভোগী হল নাবালক। তাতে এটি প্রমাণ হয় যে ওই পরিবারটি শিশুটির প্রতি যত্নশীল। তারপরেই বেঞ্চ জানায়, ‘আমরা লক্ষ্য না করে পারছি না যে (হাইকোর্টের) বিজ্ঞ একক বিচারক সন্তানের বাবার প্রতি তার মনোভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করেননি। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, জন্মের পর থেকে তার মায়ের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নাবালক প্রায় ১০ বছর ধরে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল। ২০২১ সালে সে বাবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরে দাদুর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। তারা কখনই বাবার চেয়ে ভালো দাবি থাকতে পারে না। বাবা নাবালকের হলেন স্বাভাবিক অভিভাবক। তাছাড়া, ছেলেটির মা জীবিত থাকাকালীন কোনও ছেলে বা স্ত্রীকে নির্যাতনের কোনও অভিযোগ নেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।’