গত ৫ অগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরেই চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। তার ওপর সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এবং নতুন করে অস্থির হয়ে ওঠার কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চরমে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে নতুন অন্তবর্তী সরকার। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ- আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ আগেই ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চেয়েছিল। তাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কমপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আইএমএফকে চাপ দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করা ‘সহজ নয়’, বার্তা ইউনুসের উপদেষ্টার
উল্লেখ্য, দেশটি বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক ঋণের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই ঋণ পরিশোধের ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই উদ্দেশ্যে ইউনুসের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য আইএমএফের একটি দল চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশে এসেছিল। তারা সেখানে দেশের কার্যক্ষমতা পর্যালোচনা করেছে। উল্লেখ্য, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ অক্টোবরে বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকের ফাঁকে ঋণ কর্মসূচির অধীনে ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছিলেন। সেই আলোচনার পর বাংলাদেশে আসে আইএমএফের দল। ঋণের চতুর্থ কিস্তিতে কাঠামোগত সংস্কারের শর্তাবলী মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। বৈঠকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছিল। তবে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে, বহুপাক্ষিক ঋণদাতা বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছিল। এখনও পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ২.৩ বিলিয়ন ঋণ দিয়েছে তারা। জানা গিয়েছে, আইএমএফ নথি চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার এবং আগামী ১৫ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আইএমএফ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগে সন্তুষ্ট হলেও পরবর্তী ঋণের কিস্তির জন্য নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করতে পারে। বিশেষ করে আইএমএফ রাজস্ব সংগ্রহের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সার খাতে ভর্তুকি কমিয়েছে এবং ব্যাঙ্কিং খাত পরিচালনা করছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি সংক্রান্ত সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়া, আইএমএফ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি ও প্রশাসনকে আলাদা করতে এবং একাধিক ভ্যাট হার কমানোর শর্ত দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।