তিস্তা নদী সংরক্ষণের প্রকল্পে বাংলাদেশকে সাহায্য করার আশ্বাস দিল ভারত। শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের প্রকল্পে সহায়তার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে নয়াদিল্লি। আর সেই বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর ঘোষণাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের উপর চিনের নজর পড়েছে। বড় অঙ্কের টাকারও প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
যদিও ভারতের তরফে সরকারিভাবে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে চিনকে নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে নদীগুলি আছে, সেগুলি অত্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়।’ সেইসঙ্গে তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, সেটার কারণে নদীর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দু'দেশের মধ্যে দিয়ে অনেক নদী বয়ে যায়। আর সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল তিস্তা। তাই তিস্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেজিংয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভারতের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তিস্তার ড্রেজিং এবং উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকার যে পরিকল্পনা করছে, সেটা নিয়ে ভারত যে ঘোষণা করেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওই প্রকল্প ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে চিন। ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব জমা দিয়েছে বেজিং। যদিও কোনও চিনা সংস্থাকে সেই প্রকল্পের বরাত দেওয়ার বিষয়ে ঢাকার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের ঘোষণায় হাতে অস্ত্র পাবেন হাসিনা
আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আবার চিনে যেতে পারেন। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তিস্তার প্রকল্প নিয়ে চিন যে চাপ তৈরির চেষ্টা করত, সেটা ভারতের ঘোষণার ফলে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন হাসিনা। অনেকটা খোলামেলা থাকতে পারবেন।
ভারতের কাছে বিষয়টি উদ্বেগের কেন?
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত দিয়েও বয়ে গিয়েছে তিস্তা। উত্তরবঙ্গ দিয়ে গিয়েছে। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, চিনের কোনও সংস্থা যদি সেই নদীর সংরক্ষণের প্রকল্পের বরাত পায়, তাহলে নদীর গতিপ্রবাহ-সহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বেজিং। যে অভিযোগটা ভারত মহাসাগরের ক্ষেত্রেও ওঠে চিনের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ওই মহলের আশঙ্কা, তিস্তা সংরক্ষণ প্রকল্পের দোহাই দিয়ে ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডরের (ছোট ভূখণ্ড, যা ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতকে যুক্ত করেছে) কাছে সামরিক ছাউনি তৈরি করতে পারে বেজিং। মোতায়েন করে রাখতে পারে সেনা। যা ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক হবে বলে মত কূটনৈতিক মহলের।