মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানেই এক হাই-ভোল্টেজ নির্বাচনী লড়াই। তা ঘিরে কত যে নাটকীয়তা আর ঘটনার ঘনঘটা, বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু, এই সমস্ত কিছুকেই হার মানাবে ১৮৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন!
কারণ, সে বছর একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই জিতেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্ট!
১৮৭২ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন:
১৮৭২ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ৫ নভেম্বর। আমেরিকার ইতিহাসে এই নির্বাচনটি সবথেকে বিতর্কিত। টানা দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার জন্য সেবারও ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্ট।
রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ সত্ত্বেও গ্রান্ট শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হব়াস গ্রিলেকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু, তাতে ছিল এক আজব টুইস্ট! কারণ, পপুলার ভোটের কয়েক সপ্তাহ পরই মারা যান গ্রিলে। নিয়ম অনুসারে, এরপর কার্যত নিজের কবর থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি!
যার জেরে বেজায় বিপাকে পড়ে যায় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রশাসন। একজন মৃত প্রার্থীকে কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব, সেটাই বুঝে উঠতে পারে না তারা।
ইউলিসিস এস গ্রান্টের নির্বাচনী প্রচার:
আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ইউলিসিস এস গ্রান্ট ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। সেবারের নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবেই দ্বিতীয়বারের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হন তিনি। কিন্তু, তাঁর নেতৃত্বে সকলে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না।
বিক্ষুব্ধ লিবারাল রিপাবলিকানরা গ্রান্টের সরকারি সংস্কার সংক্রান্ত নীতির বিরোধিতা করেন। তাঁরাই গ্রিলেকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেন। এতে, ডেমোক্র্যাটদের মনে হয়, রিপাবলিকানদের আর গ্রান্টের পক্ষে একজোট করা সম্ভব হবে না। তাই তারাও গ্রিলের পক্ষেই তাদের সমর্থন ঘোষণা করে দেয়। ফলত, ডেমোক্র্য়াটদের সঙ্গে লিবারাল রিপাবলিকানদের একটি অস্থায়ী জোট তৈরি হয়!
হরাস গ্রিলের নির্বাচনী প্রচার:
সেই সময় নিউ ইউ ইয়র্ক ট্রিবিউনের সম্পাদক হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন হরাস গ্রিলে। কিন্তু, রাজনীতিতে তাঁর তেমন কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁর বোকা বোকা বিভিন্ন মন্তব্য এবং ম্যাড়ম্যাড়ে প্রচার সেভাবে আমজনতার মনে দাগ কাটতে পারেনি।
বস্তুত, অনেক পরিশ্রম করার পরও গ্রান্টের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে পারেননি গ্রিলে। বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলি গ্রিলেকে পাত্তাও দিতে রাজি ছিল না।
১৮৭২ সালের নির্বাচনের ফলাফল:
পরবর্তীতে নির্বাচনের পর (পপুলার ভোট) ভোটগণনা হলে দেখা যায়, গ্রান্ট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের জয়ী হয়েছেন। ৩৭টি প্রদেশের মধ্যে ৩১টিতেই জয়লাভ করেছেন তিনি। অর্থাৎ, তাঁর জয় তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়।
কিন্তু, এরই মধ্যে গ্রিলের স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরু করে। এবং নির্বাচনের তিন সপ্তাহ পরই ১৮৭২ সালের ২৯ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুতে বেকায়দায় পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী প্রশাসন বা ইলেক্ট্রোরাল কলেজ। কারণ, গ্রিলে ইলেক্ট্রোরাল ভোটে জিতে গিয়েছিলেন। তাঁর অবর্তমানে সেই ভোট অন্য়ান্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
তবে, তাতেও কিছু বদলানোর ছিল না। কারণ, পপুলার ভোটের নিরিখে গ্রান্টের জয় নিশ্চিত ছিল। তবুও এই ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে এক অসামান্য নির্বাচনী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।
প্রসঙ্গত, ১৮৭২ সালেই প্রথমবার এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, যখন পপুলার ভোট এবং ইলেক্ট্রোরাল কলেজ ভোটের প্রক্রিয়ার মাঝেই কোনও প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। ১৮৭২ সালের পর আর কখনও এই ঘটনা ঘটেনি।