আইএসআইয়ের শীর্ষকর্তাদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিল ভারত। কোনওরকম রাখঢাক না করে শুক্রবার সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্টভাষায় জানিয়েছেন, পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। তাঁর কথায়, 'আমাদের দেশের চারপাশে এবং আমাদের অঞ্চলে কী কী হচ্ছে, সেদিকে আমরা নজর রাখি। সেইসঙ্গে (ভারতের) জাতীয় সুরক্ষার উপরে প্রভাব ফেলবে, এমন কোনও কর্মকাণ্ডের উপরেও (নজর রেখে চলি আমরা)। সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।'
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামরিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা
আর যখন তিনি সেই মন্তব্য করেছেন, তখন সামরিক বিষয়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানে গিয়েছিল বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল (১৩ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি)। আর তারপর বাংলাদেশ সফরে এসেছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স) একটি প্রতিনিধি দল।
আরও পড়ুন: Yunus on Indian Map: চিনকে বন্ধু বলে ভারতের মানচিত্র নিয়ে টিপ্পনি মহম্মদ ইউনুসের, বিশেষ কোনও ইঙ্গিত?
সূত্রের খবর, ওই প্রতিনিধি দলে আছেন আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অফ অ্যানালিসিস মেজর জেনারেল আমির আফসর। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ছাউনিতে যাওয়ারও কথা ছিল প্রতিনিধি দলের সদস্যদের। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে আবার সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান যোগসূত্র বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে একে অপরের দেশে গেলেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামরিক কর্তারা।
'মধুচন্দ্রিমা'-র চেষ্টা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান?
বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হাসিনার আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগসূত্র কেটে দেওয়া হয়েছিল। এমনকী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়েছিল হাসিনার আমলে। তাতে চটে গিয়েছিল ইসলামাবাদ। সেই হাসিনার পতনের পরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান নতুন করে 'মধুচন্দ্রিমা' শুরু করতে চাইছে বলে একাংশের ধারণা।
ওই মহলের বক্তব্য, শেষ ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনও স্বীকৃত সফরে আসেনি পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার প্রতিনিধি দল। যে আইএসআই নব্বইয়ের দশক তো বটেই, একবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও ভারতে অশান্তি পাকানোর জন্য বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করত। যে কথাটা নয়াদিল্লির বর্ষীয়ান আধিকারিকদের স্মরণে রয়ে গিয়েছে। ফলে এবারও আইএসআইয়ের ছক নিয়ে আশঙ্কার মেঘ রয়ে গিয়েছে।
আইএসআই সফর নিয়ে মুখে কুলুপ বাংলাদেশ সরকারের
যদিও আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের প্রেস উইংয়ের তরফে শুধু বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আইএসআই প্রধান বাংলাদেশে এসেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্য নয়।’ কিন্তু আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দলের সফরের বিষয়টি খারিজ করে দেওয়া হয়নি।