'দিল্লির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, বিএসএফের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'সীমান্তে হামলা হলে জবাব দেবে বাংলাদেশ', শনিবার গভীর রাতে এই ধরনেরই স্লোগানে মুখোরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। উল্লেখ্য, ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশি দস্যুদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ রুখতে সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জখম হন বলেও দাবি করা হয়েছে। এই আবহে বিএসএফের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মিছিল বের করেন গভীর রাতে। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১১টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে 'আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ' ব্যানারের অধীনে থাকা কয়েকজন পড়ুয়া। এরপর ক্যাম্পাস ঘুরে এসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনেই একটি সংক্ষিপ্ত সভা করেন তাঁরা। এর আগে আবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় মশাল মিছিল করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। (আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে 'সুপ্রিম নির্দেশিকা' অমান্য করছে CBI? বিস্ফোরক নির্যাতিতার মা)
এই নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পড়ুয়া তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় পারকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্র তুলে নিয়েছিল কৃষক সমাজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একই ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিতেও ভারতের থাবা পড়তে দেব না। বাংলাদেশের মানুষ সীমান্ত রক্ষা করতে জীবন দিতে প্রস্তুত।' এদিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন সমন্বয়ক মহম্মদ হাসিবুল ইসলাম আবার বলেন, 'দিল্লির কথা মতো আর চলবে না বাংলাদেশ। বিএসএফ যদি হামলা চালায়, তাহলে বিজিবি এবং দেশের মানুষ জবাব দিতে প্রস্তুত।'
উল্লেখ্য, মালদার শুকদেবপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বিএসএফকে লাগাতার বাধা দিয়ে আসছে বিজিবি। এই নিয়ে ডিসেম্বর মাসে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে সীমান্তে। দিন কয়েক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকার পর অবশ্য ১৮ জানুয়ারি সকাল থেকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে। লাঠি, হাঁসুয়াসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে ভারত ভূখণ্ডে হামলা চালানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশিরা। অভিযোগ, স্থানীয়দের ক্ষেতের ফসল লুঠপাট করে তারা। পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ভারতীয় গ্রামবাসীরাও। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় প্রচুর বিএসএফ জওয়ান। দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ভারতীয়দের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে বাংলাদেশিরা। তাদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। তবে তাতেও পিছু হঠেননি গ্রামবাসীরা। অবশেষে বাংলাদেশি দস্যুদের পিছু হঠাতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বিএসএফ।
পরে ঘটনা প্রসঙ্গে বিএসএফ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, 'ভারতীয় কৃষকদের পুরোপুরি পিছু হটানো হয়েছে, তবে বিকেল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৫০-৭৫ মিটারের মধ্যে কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে এ অঞ্চলের বিএসএফ ও বিজিবি ইউনিটের কমান্ড্যান্টরা সমন্বয় জোরদারে কাজ করছেন। সীমান্তের পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে।'