২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ১০ বছর বয়সি বাংলাদেশি নাবালিকা ফেলানি খাতুনের মৃতদেহ। দাবি করা হয়, তিন ঘণ্টা সেখানে ঝুলন্ত অবস্থায় বেঁচে ছিল ফেলানি। পরে তার মৃত্যু হয়েছিল। এই মৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফ জড়িত বলে অভিযোগ করেছিলেন ফেলানির মা-বাবা। এই আবহে মেয়ের মৃত্যুর ১৪তম বার্ষিকীতে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার উগড়ে দিতে শোনা গেল ফেলানির মা জাহানারা বেগমের গলায়। গতকাল ঢাকার শহিদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে জাহানারা বলে, 'আমাদের যে নতুন সরকার গঠন হয়েছে, তারা যেন কিছুতেই ভারতকে ছেড়ে না দেয়।'
জাহানারা বেগমের কথায়, 'আমার মেয়ে তিন ঘণ্টা জীবিত ছিল। কিন্তু ওখানে তখন কেউ সাড়া দেয়নি। আমার মেয়ে যে রকম কাঁটাতারের মধ্যে ঝুলে ছিল, যদি ফেলানির বিচার হত, আগের সরকার যদি বিচার করত, তাহলে আমার মেয়ের মত আর কোনও মায়ের সন্তান ওই কাঁটাতারে ঝুলত না। মারাও যেত না।' এদিকে এই ঘটনা প্রসঙ্গে ফেলানির বাবা বলেন, '১৪ বছর হয়ে গেল, আমার ফেলানির বিচার এখনও হয় নাই। এত দিন আওয়ামি লিগ সরকার ছিল, তখন আমাকে অনেক চাপে রাখছিল, কারও সাথে কথা বলতে দেয়নি। কিন্তু এখন আমি চাই যাতে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়। আমার মেয়েকে বিএসএফের যে অফিসার নির্মম ভাবে মেরেছে, আমি তার সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাচ্ছি।'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় ফেলানি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল ১৪ বছর আগে। বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ানদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছিল এর জন্যে। ফেলানির বাবা ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করতেন। বাবার সঙ্গে সেখানেই সে থাকত। দেশে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় ১০ বছর বয়সি ফেলানি নাকি বাবার সঙ্গে ফিরে যাচ্ছিল বাংলাদেশে। কাটাতাঁর পার করে বাবার সঙ্গে দেশে ফেরার সময় ফেলানি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। কাঁটাতার ডিঙিয়ে সীমান্ত পার করতে গিয়ে ফেলানির পোশাক আটকে গিয়েছিল। সেই সময় ভয়ে সে চেঁচিয়ে উঠেছিল। এই আবহে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জওয়ানরা নাকি গুলি করেছিল ফেলানিকে। দাবি করা হয়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাঁটাতারে প্রা ৩ ঘণ্টা ওপরে ঝুলে ছিল ফেলানি। তখনও সে জীবিত ছিল। পরে সেখানেই সেভাবে মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল সীমান্তের দুই দিকেই।