আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বিএসএফ এবং বিজিবির প্রধানদের বৈঠক হতে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়কালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, তার সমাধানসূত্র সেই সম্মেলনে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং বাংলদেশের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। উল্লেখ্য, ওমানের রাজধানী মাসকটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই বিএসএফ এবং বিজিবি ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের তরফ থেকে। (আরও পড়ুন: 'প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে', যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে ভারতের হাত ধরার বড় বার্তা ইউনুস)
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর বিএসএফ ও বিজিবির (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস) মহাপরিচালকদের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৩ সালে নয়াদিল্লি ও ঢাকায় বিএসএফ এবং বিজিবির শীর্ষ কর্তাদের দ্বিবার্ষিক সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই আবহে বিজিবির এবং বিএসএফ প্রধানদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসেই। তবে সেই বৈঠক সময়মতো হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারিতেই সেই বৈঠক হতে পারে বলে জানা গিয়েছিল। উল্লেখ্য, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জায়গায় বিএসএফকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বাধা দিয়েছে বিজিবি। এই আবহে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মালদার সুকদেবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ছড়িয়েছিল। গত ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশিরা চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। সুকদেবপুরবাসীদের অভিযোগ, ইউনুস জমানাতেই বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে লুটপাট চালাতে শুরু করেছে। তেহট্ট এলাকাতেও কৃষিজমিতে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে উত্তর দিনাজপুরে অনপ্রেশের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এদিকে উত্তরে জলপাইগুড়িতেও সীমান্তে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। সীমান্ত নিয়ে নদিয়াতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।
অপরদিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোদালিয়া নদীর অংশে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাকি বিজিবি নিজেদের 'দখল প্রতিষ্ঠা' করেছিল সম্প্রতি। এই ৫ কিলোমিটার জমি নিয়ে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে দেখা দেয় মতপার্থক্য। উল্লেখ্য, এই কোদালিয়া নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় দিয়ে। এরপর কিছু দূর বয়ে তা মহেশপুরের মাটিলা সীমান্ত দিয়ে আবার ভারতের রানাঘাটে প্রবেশ করে। এখানেই প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে 'মতপার্থক্য'। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালের মানচিত্রের বরাত দিয়ে বিজিবি দাবি করে, ওই ৫ কিলোমিটার এলাকা তাদের। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানাচ্ছে বিজিবি। এদিকে অনুপ্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করলে তাতেও আপত্তি ওপারের শাসক গোষ্ঠীর। এহেন পরিস্থিতিতে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে মতানৈক্য দেখা গিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। এই আবহে মালদা সহ একধিক জায়গায় ভারতীয় ভূখণ্ডের কাঁটাতার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বিএসএফ। এর জেরে সীমান্তের বহু জায়গায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭৫ সালে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুকি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা অনুযায়ী, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে 'প্রতিরক্ষা কাঠামো' তৈরি করা যাবে। এদিকে ২০১০ সালে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতকে লিখিত আকারে অনুমতি দিয়েছিল যে সীমান্তে ১৫০ গজের ভিতরেও প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে ভারত। এই কথা নিজে স্বীকার করেছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। এখন বাংলাদেশের গদিতে 'মুখ' পরিবর্তনের পরে তাদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, আগের সরকারের স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে বাধ্য তারা।