আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হবে না বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। আবার কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনুস বলেছিলেন, 'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই'। এদিকে দাবি করেছিলেন, সরকারে আসার পরই নাকি মোদীর সঙ্গে 'কথা' হয়েছিল তাঁর। অনেক বিশ্লেষকেরই মত, ব্যাংককে আসন্ন বিমস্টেক সম্মেলনে মোদীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করার জন্যেই 'সুর' নরম করেছেন ইউনুস। নয়ত যেই ইউনুস সরকারে আসার আগে ভারতকে 'সেভেন সিস্টার' নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তিনিই সম্প্রতি উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। তবে ইউনুস যেখানে মোদীকে 'খুশি' করতে এত কিছু করছেন, সেখানে হাসনাত, মাহফুজরা ভারতের নামে কুৎসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। (আরও পড়ুন: রক্তাক্ত কোয়েটা, গ্রেফতার মাহরাং, বালোচিস্তানে 'বাংলাদেশের ভুল' পাকিস্তানের?)
হাসনাত আবদুল্লাহ নিজে কোনও সময় ইউনুসের সরকারের কোনও পদে ছিলেন না। তবে হাসিনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার যে হাসনাত-সারজিদের মতো যুব নেতাদের কথাতেই চলেছে, তা মোটামুটি সর্বজনবিদিত। এহেন হাসনাত সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, সেনার তরফ থেকে নাকি তাঁদের ক্যানটমেন্টে ডেকে নিয়ে ধমক দেওয়া হয়েছিল। 'রিফাইন্ড আওয়ামি লিগকে' বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরানোর জন্যে নাকি সেনা ছক কষছে বলে দাবি করেন হাসনাত। এই নিয়ে দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবার ভারতের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। একটা জায়গায় তিনি লিখেছিলেন, 'আওয়ামি লিগকে ফেরানোর এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের।' যদিও এর কোনও প্রমাণ এই 'বিপ্লবী' দিতে পারেননি। মনের মাধুরি মিশিয়ে শুধু ভারত বিদ্বেষ ছড়ানোই ছিল তাঁর লক্ষ্য। (আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ের ২ বছর পর HAL-এর হাতে তেজসের প্রথম F-404 ইঞ্জিন তুলে দেবে GE)
আরও পড়ুন: লাদাখে নতুন ২ কাউন্টি তৈরি চিনের, জবাবে কী করছে ভারত? সংসদে যা বলল সরকার…
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গলাতেও ভারত বিরোধী বক্তব্য শোনা গেল। এর আগে এই মাহফুজ আলমই ফেসবুকে ভারত ভাঙার পোস্ট করেছিলেন। আর আওয়ামি লিগ ইস্যুতে মাহফুজ সম্প্রতি বলেন, 'আওয়ামি লিগের সুতো দিল্লিতে ধরা হয় আর ঘুড়ি ওড়ে বাংলাদেশে। এই ঘুড়ি আর বাংলাদেশে উড়তে দেওয়া হবে না।' উল্লেখ্য, এই মাহফুজকে নিউইয়র্কে ক্লিন্টনের অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন ইউনুস। সেখানে মাহফুজকে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের 'মাথা' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এহেন মাহফুজ সরকারের প্রধানের বিপরীত সুরে কথা বলছেন।
এদিকে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি জানান, দিল্লির কাছে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানিয়েছেন মোদী-ইউনুস বৈঠকের জন্যে। তবে বাংলাদেশের যুব নেতারা যেভাবে ভারত বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তাতে মোদী আদৌ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশি মিডিয়াতেও সেই সংশয় ফুটে উঠেছে। এর আগে ২০২৪ সালে নিউইয়র্কেও মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে বিফল হয়েছিলেন ইউনুস। এদিকে আওয়ামি লিগ নিয়ে ইউনুসের মন্তব্যের বিরোধিতায় ঢাকার রাস্তায় ফের আন্দোলন শুরু হয়েছে। একদিকে হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টরপন্থী সংগঠন, অন্যদিকে এনসিপি এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তারা অনড়। এহেন পরিস্থিতিতে আবার সেনা নাকি হস্তক্ষেপ করছে। এই সব মিলিয়ে ইউনুস যেন এখন কাঁটার সিংহাসনে বসে আছেন। এদিকে মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে যেন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন মাহফুজ, হাসনাতরাই।